রাজবাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে পদ্মা নদীর বিভিন্নস্থানে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব চলছে। অথচ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কালিতলা ও মহাদেবপুর এলাকার পদ্মা নদীতে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের এবারের অভিযান চলছে ঢিলেঢালাভাবে। অভিযানের আগেও তেমন কোনো প্রচার ও প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি তাদের। এছাড়া জেলেদের নিয়ে তারা কোনো সভা-সেমিনার বা কর্মশালাও করেনি। যার কারণে জেলেরা সাহস করে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে ইলিশ শিকারে নামছে।
বুধবার দুপুরের দিকে মিজানপুর ইউনিয়নের কালিতলা ও মহাদেবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর কালিতলা এলাকায় মৎস্য দপ্তরের একটি অভিযান টিমের ট্রলার নদীর পাড়ে ভিড়ানো। সেই ট্রলারে সদর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামালসহ চারজন বসে গল্প করছে। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে পাকা সড়ক ধরে ৫০০ মিটার সামনে এগিয়ে মিজানপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মহাদেবপুর এলাকায় দেখা যায় জেলেদের মিলনমেলা। জেলেদের এক গ্রুপ ট্রলার নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আরেক গ্রুপ নদীর পাড়ে বসে কারেন্ট জাল ও ট্রলারের ইঞ্জিনের মেরামত করছে। আরেকটু সামনে এগোতেই দেখা যায়, এক জেলে নদী থেকে মাছ ধরে বস্তায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখে তিনি ইতস্ততবোধ করে দ্রুত সরে যান।
মহাদেবপুর এলাকার শেষ মাথায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নৌকা পদ্মা নদীতে। তারা কেউ জাল ফেলছে আবার কেউ জাল তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এদিকে কালিতলা এলাকায় নদীর পাড়ে অবস্থান করা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামালকে জেলেদের মাছ ধরার বিষয়টি জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
সদর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগেই অভিযান শেষ করে এখানে এসেছি। কিছু জাল জব্দ করেছি। সেগুলো এখন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।’ তাকে মহাদেবপুর এলাকায় জেলেদের নদীতে মাছ ধরার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা তো নদীতে কাউকে দেখিনি।’
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত জেলের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৭৭ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৭ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে মোট ১৩৭ দশমিক ৪৩ টন ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৮০ জন জেলের মাঝে মোট ৩২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৪ হাজার ২১৭ জনকে চাল বিতরণের কাজ বৃহস্পতিবার নাগাদ সম্পন্ন করা হবে বলে মৎস্য অফিস থেকে জানানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিতলা ও মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, অভিযানের প্রথম দিন জেলেরা নদীতে না নামলেও দ্বিতীয় দিন থেকে জেলেরা নদীতে নামছে। জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইলিশ শিকার করছে। আর ওই সব মাছগুলো জেলেরা বাড়ি থেকেই বিক্রি করছে। ওই মাছগুলো শহরের কিছু চাকরিজীবী ও অভিজাত লোক তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কিনছে। তারা ওই মাছগুলো ক্রেতাদের বাড়িতে গিয়ে হোম ডেলিভারি দিয়ে আসে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব উল হক বলেন, ‘সরকার ২২ দিন নদী থেকে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন নিষেধ করেছে। যারা এই আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ আমাদের অভিযানে সহায়তা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর অংশ রয়েছে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার। পদ্মা নদীর এই বড় একটি অংশে একই সময়ে অভিযান দেওয়া সম্ভব হয় না। একদিকে অভিযান চালালে অন্য দিকে জেলেরা নামে। কিছু অসাধু জেলে যারা রয়েছে তারা এ সময় নদীতে নামবেই। আমরা চেষ্টা করছি অভিযানের মাধ্যমে এসব অসাধু জেলেদেরকে আটক করার।’
মন্তব্য করুন