২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এসে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের তথা (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে সেবা খাতে।
বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত নিয়মিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের সংগৃহীত উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন ২০২৫) জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চার কোয়ার্টারের স্কুল দেশজ উৎপাদ (জিডিপি) ও প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে অর্থনীতির গতি কমলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ প্রান্তিকে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ১৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বিবিএসের প্রকাশিত জিডিপির তথ্যে দেখা যায়, প্রাক্বলিত হিসাব অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪র্থ কোয়ার্টারে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি প্রাক্বলন করা হয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এ অর্থবছরের সব প্রান্তিকের সঙ্গে আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকগুলোর তুলনা করছে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই আগের অর্থবছরের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। বাকি সব প্রান্তিকেই এগিয়ে ছিল দেশের অর্থনীতি। আগের অর্থবছরের অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন কোয়ার্টারে যা ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। চার কোয়ার্টারের সম্মিলিত হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থির মূল্যে স্থুল দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে এসে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা পিছিয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
তবে এ সময় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় বেড়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এ সময় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শেষ সময়ে এসে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধাক্কা এসেছে। স্থির মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এদিকে, বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে নানা ধাক্কার পরও বছরের শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রপ্তানির জোয়ার, প্রবাসী আয়ের রেকর্ড এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অর্থনীতি আবার গতি ফিরে পেয়েছে— এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদন। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকবে। যথাযথ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে সংস্থাটি বলছে, তবে এই ধারা ধরে রাখতে সাহসী ও সময়োপযোগী সংস্কার এখন অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২৫ অর্থবছরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের ফলে বৈদেশিক চাপ কিছুটা কমেছে। রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি সংকুচিত হয়েছে, রিজার্ভও স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। কঠোর মুদ্রানীতি, ভালো ফসল এবং জরুরি খাদ্যপণ্যে শুল্ক কমে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে রাজস্ব আয় দুর্বল থাকার পাশাপাশি ভর্তুকি ও সুদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতি আরও বেড়েছে।
মন্তব্য করুন