রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে তিনজনকে নির্যাতনের ঘটনার মামলায় বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মামলার বাদী।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ অক্টোবর হিমাগারে তিনজনকে নির্যাতনের ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নির্যাতনের শিকারদের দেখতে যান। পরে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, হেলমেট পরা এক ব্যক্তি তাকে খুঁজতে বাড়িতে গিয়েছিলেন।
বাদীর নানির বরাতে জানা যায়, ওই ব্যক্তি তাকে না পেয়ে নানিকে বলেন, ‘মামলাটি তুলে নিতে হবে, না হলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাদীর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও চেনেন, মামলাটি না তুললে তাদের ক্ষতি করা হবে। এতে বাদী ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
বাদী অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলেই মামলা রেকর্ড হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু পুলিশ রাত ৯টা পর্যন্ত সময় নেয়। এই ফাঁকে আসামিপক্ষের লোকজন আমাদের টাকার প্রলোভন দেয় মামলা না করার জন্য। পুলিশ মামলা নিতে দেরি করায় তারা সেই সুযোগ পায়। আমরা টাকার প্রলোভনে না পড়ে মামলা করেছি। এখন মামলা তুলতে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘নির্যাতনের মামলাটি যে উপ-পরিদর্শক তদন্ত করছেন, তাকেই জিডিটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাদীর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে আসামি আহসান উদ্দিন সরকার জিকোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ হয়নি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় মোহাম্মদ আলী সরকারের মালিকানাধীন একটি হিমাগারে এক তরুণ (২৭), এক নারী (৩০) ও এক কিশোরীকে (১৩) ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের শিকার তরুণ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই নারী ও কিশোরী তার খালাতো বোন। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবা (৪০)। তাদের অভিযোগ, বাবা মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে ওই নারীর ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ রয়েছে— এমন সন্দেহে তারা এ নির্যাতন চালান।
ঘটনার পর স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেন এবং হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালান। পরে পুলিশ নির্যাতনের শিকার তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তবে পরদিনই তারা আদালত থেকে জামিন পান।
বাদীর অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল ধারায় মামলা রেকর্ড করায় আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে যান। বাদীর আশঙ্কা, তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। এ বিষয়ে আদালতে আবেদন জানিয়ে তিনি আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন