গোপালগঞ্জের মহেশপুর ও মুকসুদপুর রেলস্টেশনে থামে না ট্রেন। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা- বেনাপল রুটে যাত্রীসেবার কথা বিবেচনা করে পদ্মা সেতু হয়ে রেলসংযোগ নির্মাণ করে সরকার। ২০২৩ সালে যাত্রীসেবা চালু করা হয়।
তবে দুই বছর ধরে এই রুটে ট্রেন চললেও চালু হয়নি কিছু স্টেশন। এর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ও মুকসুদপুর উপজেলার মুকসুদপুর স্টেশন। এতে মহেশপুর ইউনিয়নের ৪৯ গ্রাম ও মুকসুদপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রায় ১০ লাখ মানুষ রেলওয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
স্টেশন দুটিতে বিকেল হলেই পরিবার পরিজন নিয়ে ট্রেন দেখতে আসে স্থানীয়রা। স্টেশন চালু না থাকায় তরুণ-তরুণী ও যুবকদের আড্ডা,মাদকসেবীদের আনাগোনাসহ চুরির ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।
সূত্রমতে, ঢাকা কমলাপুর থেকে বেনাপোল ও খুলনা রেলওয়ে রুটে মোট স্টেশন ২৮টি, এর মধ্যে চালু আছে ১৫টি, বন্ধ ১৩টি।
জানা গেছে ,একটি স্টেশন চালু রাখতে তিন জন মাস্টার, পয়েন্টস ম্যান ৬ জন,বুকিং সহকারী ৩ জন, পোটার তিন জন, পরিছন্নকর্মী তিন জন। এ অবস্থায় ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা- বেনাপল রুটে চালু না হওয়া রেলস্টেশনগুলোতে ২৩৪ জন লোকবল প্রয়োজন।
মহেশপুর স্টেশন চালু করার দাবিতে জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মোল্লা কালবেলাকে বলেন, স্টেশন করাতে আমাদের জমা জমির অনেক ক্ষতি হয়েছে, কিন্ত এখানে ট্রেন স্টেশন করে কী লাভ হলো ট্রেন থামে না, এখান থেকে ৫০/১০০ টাকা খরচ করে দূরে গিয়ে উঠতে হয়।
তিনি বলেন, আমার বাড়ির ওপর দিয়ে ট্রেন যায়, অথচ ট্রেন থামে না। আমরা তো ভাড়া দিয়েই যাব, আমরা চাই এখানে ট্রেন থামুক আমরা উঠব আনন্দ লাগবে।
এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন কালবেলাকে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেশন তৈরি করলেও থামে না ট্রেন। স্টেশন চালু না হওয়ায় স্থানীয় চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, রোগীসহ অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মুকসুদপুর রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন কালবেলাকে বলেন, ট্রেন আমাদের এখানে থামবে না। আমরা এই স্টেশন থেকে সেবা পাব না তাহলে এখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেন স্টেশন তৈরি করা হলো? আমাদের মুকসুদপুর উপজেলার লাখ লাখ মানুষ এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এই স্টেশন থেকে যাত্রী সেবা চালু হোক।
স্থানীয় জয়নগর এলাকার বাসিন্দা ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম কালবেলাকে জানান, মহেশপুর ও মুকসুদপুর ট্রেন স্টেশন থেকে দ্রুত যাত্রী সেবা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
রেলওয়ের কাশিয়ানী স্টেশনমাস্টার অনিক বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, স্টেশন দুটিতে লোকবল বরাদ্দ না হওয়ায় এখনো চালু হয়নি। কবে চালু হবে, সে ব্যাপারে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরা জানালে আমরা জানাতে পারব। মহেশপুর - মুকসুদপুর স্টেশন দুটির মতো এই রুটে আরও ১১টি রেলস্টেশন বন্ধ আছে জনবল-সংকটের কারণে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা ব্যবস্থাপক (পশ্চিম) ফরিদ আহমেদ মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আমাদের বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মমে কাজ করতে হবে, কিছু প্ল্যাটফর্মে সমস্যা রয়েছে। প্রথমিক পর্যায়ে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেখানে সমস্যা বেশি,যেগুলোতে লোক চলাচল বেশি হয়,বড় বড় স্টেশন, যেখানে যাত্রীদের সমাগম বেশি সেগুলোকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের বাজেট স্বল্পতা আছে, লোকবল সংকট রয়েছে। এখন সবগুলো স্টেশন একসঙ্গে চালু করার মতো অবস্থা আমাদের নেই।
মন্তব্য করুন