

দেশজুড়ে প্লাস্টিক দূষণজনিত পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছানোয় বরগুনায় অনুষ্ঠিত হলো ‘টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার ও সামুদ্রিক বর্জ্য প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক সেমিনার এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি।
পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) ও জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বরগুনা পৌরসভা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তা, পরিবেশবাদী সংগঠন, ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যসহ ৩০০-র বেশি মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. ইব্রাহীম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, ইউনিডো বাংলাদেশের এস. এম. আরাফাত, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরুণাভ চৌধুরী, ধরার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ, জেলা বিডি ক্লিনের সমন্বয়ক নাইম, মিজান টাওয়ার ও মসজিদ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম টিপু ও পৌর সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান তসলিম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইউনিডোর জাতীয় বিশেষজ্ঞ এস. এম. আরাফাত বলেন, প্লাস্টিক দূষণ শুধু জাতীয় সমস্যা নয়, এটি এখন বিশ্বব্যাপী সংকটে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আইনি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি জানান, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ভুল ব্যবস্থাপনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যা, নদী-খাল দূষণ এবং এসব বর্জ্য সাগরে গিয়ে সামুদ্রিক পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি তৈরি করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪.১০ লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, যার বড় অংশই সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত হয় না। তিনি পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্য ব্যবহারের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অরুণাভ চৌধুরী বলেন, নাগরিকদের জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে না পারলে প্লাস্টিক দূষণ কমানো সম্ভব নয়। সহযোগিতা ও সম্মিলিত উদ্যোগেই টেকসই ফল পাওয়া যাবে।
বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরসভার ১৮০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রতিদিন কাজ করছেন। তিনি আরও বেশি ডাস্টবিন স্থাপন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে সহযোগিতা চান।
প্রধান অতিথি মো. ইব্রাহীম বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদেশ সফরে যেভাবে পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মানা হয়, দেশে ফিরেও সেই অভ্যাস বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। তরুণদের পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্য উদ্ভাবনের দিকেও উৎসাহিত করেন।
সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারীরা টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শপথ পাঠ করেন। পরে বরগুনা শহরের ৭ নং ওয়ার্ড, বাজার খেয়াঘাট, বরগুনা লঞ্চঘাট ও টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ সময় ৩১২.১৫ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, যা পরে অনুমোদিত রিসাইক্লিং প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মন্তব্য করুন