

নানা কর্মসূচিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেটে পালন হয়েছে মহান বিজয় দিবস। এসময় লাল-সবুজের আবরণে সেজে ওঠে শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণ। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষ ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। শিশু থেকে শুরু বৃদ্ধ বয়সের মানুষ রং-বেরঙের পোশাকে সেজেছিল। কারো হাতে এই বাংলার লাল-সবুজের পতাকা। কারো হাতে এক গুচ্ছ নানা রঙের ফুল ছিল।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে জড়ো হন সর্বস্তরের মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ভিড়ে আনন্দ উল্লাসে ভরে উঠেছিল চারদিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে। এসময় শহীদ মিনারসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয় মহান বিজয়। তবে এবার শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। সকাল ৯টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সকাল থেকেই সেখানে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় কবি কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এবার প্রথম বিজয় দিবস উপলক্ষে সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলমের নির্দেশনায় জেলার সব ব্যবসায়ী সংগঠন, বহুতল মার্কেট, বাজার ও বাণিজ্যিক ভবনে সকাল ৬টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উদ্যোগে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি বের করা হয়। জেলা ও মহানগর ছাত্রশক্তি ও যুবশক্তির যৌথ আয়োজনে র্যালিটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে, এদিন সকাল ১১টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সিলেটে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা পরাধীনতা মেনে নেয়নি বলেই স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। সমাজের ও রাষ্ট্রের অসংগতি অনুধাবন ও চিহ্নিত করে এবং সব নির্যাতন, নিপীড়ন, অপশাসন, দুঃশাসন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই হলো প্রকৃত মানুষের বৈশিষ্ট্য। সে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা শুধু দেশ ও জাতির নয় পুরো পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এদিনে নতুন আত্মপরিচয় নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড ও নতুন পতাকা পেয়েছিলাম। দীর্ঘ ২৪ বছরের অপশাসন ও দুঃশাসনের শেকল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে আমরা এদেশের মালিকানা অর্জন করেছিলাম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে৷ এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি এ জাতির মৌলিক ও মানবিক অধিকার সমুন্নত রাখা এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে উল্লেখ করে খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী একটি দেশ।
এসময় জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ ও মো. আশরাফুর রহমান, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন