থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বান্দরবানে শিক্ষা ও চিকিৎসাবঞ্চিত ৩০০ পরিবারের শিশু

বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলের শিশু। ছবি : কালবেলা
বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলের শিশু। ছবি : কালবেলা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি পর্যটন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। ভ্রমণকারীদের জন্য এলাকাটি অতি জনপ্রিয় হলেও এই এলাকার ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসা শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।

স্থানীয়রা জানায়, থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউপির ৬ ও ৯ নম্বর দুই ওয়ার্ডে প্রায় গত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মেনহাত ম্রো পাড়া , বুলু পাড়া , থাংকোয়াই ম্রো পাড়া, কোয়াংক্ষ্যং পাড়া, ইয়ং ডং ম্রোক্ষ্যং পাড়া, চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা পাড়া, ক্লুং ক্ষ্যং ম্রো পাড়া, রুইওয়াই ম্রো পাড়া , কংকং ত্রিপুরা পাড়া, ইয়ং ক্লাং ম্রো পাড়া, মালুমগ্যা পাড়া, সূর্য্যমনি ত্রিপুরা পাড়া,লাই পুং পাড়া , ইয়াংবং, মাংচাই, বাচি অং, মেথোয়াই পাড়া, মেনপ্রে ম্রো পাড়াসহ মোট ১৮ থেকে ১৯টি পাড়া গড়ে উঠেছে।

এসব পাড়ায় ৩০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা পরিবারের বসবাস। যার মধ্যে অন্তত একতৃতীয়াংশের বেশি শিশু-কিশোর রয়েছে। গত ২০ থেকে ৩০বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস শুরু হলেও কোনোদিনও কোনো স্বাস্থ্যকর্মী পৌঁছায়নি ওই পাড়াগুলোতে। তেমনি পায়নি অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বা রোগপ্রতিরোধক টিকা। গড়ে উঠেনি কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ফলে শিক্ষা, শারীরিক অপুষ্টি জনিতসহ নানা রোগ-শোকের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে শিশুরা।

সরেজমিনে গেলে কথা হয় লইক্রি পাড়ার পাড়া প্রধান ঙৈ তং ম্রো কারবারির সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে ২০টি পরিবারের ১০০ জন সদস্য মিলে লইক্রি পাড়া এলাকায় বসতি গড়ে তুলেন। বর্তমানে ৩৭ পরিবারের প্রায় আড়াইশ জনের বসবাস। এই ২০ বছরের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী তাদের পাড়াতে আসেনি এবং গত ১৯ বছরের মধ্যে কোনো স্কুলও হয়নি। কোনো স্বাস্থ্যকর্মী পাড়ায় না আসায় আজ পর্যন্ত কোনো শিশুই সরকারিভাবে দেওয়া ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বা রোগপ্রতিরোধক টিকা পায়নি।

তিনি আর ও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে থানচি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মংওয়ে মাহাজনের ছেলে মংমংসিং হাতে গড়ার স্থানীয় এনজিও সংস্থা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে লইক্রি পাড়া এলাকায় চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও বাকি ১৭ পাড়ায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ নেই শিশুদের।

রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ডলুঝিড়ি পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পান ঝিড়ি (কোয়াইং ক্ষ্যং) ম্রো পাড়ার কারবারি পাড়াপ্রধান কাইং ওয়াই ম্রো জানান, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মিলে ১৮টির বেশি পাড়ায় প্রায় ২ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস হলেও আজ পর্যন্ত তাদের পাড়ায় কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আসেনি। ফলে পাড়ার শিশুরা যেমন কোনদিন টিকা ও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল পায়নি তেমনি অন্তঃসত্ত্বা মায়েরাও পায়নি স্বাস্থ্যসেবা বা ডাক্তারি পরামর্শ। এ ছাড়া এই এলাকায় কোনো স্কুল না থাকায় শিক্ষা কি জিনিস তা জানে না শিশুরা।

রেমাক্রি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মানচং ম্রো জানান, এলাকাটি দুর্গম আর যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেতে আগ্রহী নয়। যার ফলে ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শিশুরা কোনোদিন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ও টিকা পায়নি। আগামীতে এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বান্দরবান কার্যালয় থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি ও ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন জেলায় শতভাগ শিশুকে টিকা বা ভিটামিন-এ প্রদানের কথা বলা হলেও রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুই শৈ থুই মারমা জানান, থানচি উপজেলার আয়তন ১০২০বর্গ কিলোমিটার তার মধ্য শুধু রেমাক্রী ইউনিয়নের আয়তন ৪৯৭ বর্গকিলোমিটার যা রুমা-রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকেও বেশি আয়তনের। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে রেমাক্রী ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৮হাজার ৬শ’ দেখানো হলেও ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে বর্তমানে এই ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। যার মধ্যে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস হলেও এলাকাটি দুর্গম ও যোগাযোগের মাধ্যম একমাত্র নৌপথ হওয়ার কারণে ওই এলাকার শিশুরা কখনো ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ও টিকা দেওয়া সুযোগ হয়নি ।

উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ওই অঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আগে জানতাম না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ওই এলাকার কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা নেই। যতটুকু শুনেছি এলাকাগুলো বেশ দুর্গম। তবুও সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রেমাক্রির ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাগুলোতে অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের (বিশেষ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম) মধ্যে সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যান্টিন স্টাফদের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ারের জার্সি উপহার 

স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক এমপি সামছুল আলমের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা 

বাথরুমে একদম খোলামেলা গোসল করেন? হতে পারে যে ৩ বিপদ

শোবিতাকে ছাড়া বাঁচতে পারি না : নাগা চৈতন্য

চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে গিয়ে আহত ৩ পুলিশ সদস্য

হেলিকপ্টারে এসে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন প্রবাসী

ইসফাকের জায়গায় বিসিবি পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা

আগামী ৫ দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

শ্বশুরবাড়িতে গাছে ঝুলছিল জামাইয়ের মরদেহ 

হিসাবরক্ষণ পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

১০

ইরানের হাতে আসছে ‍রুশ অস্ত্র, মধ্যপ্রাচ্যে কী হতে যাচ্ছে?

১১

নারী বিশ্বকাপের জন্য ২১ সদস্যের দল ঘোষণা ব্রাজিলের

১২

‘সহজক্যাশে’ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা

১৩

রেড ক্রিসেন্টে চাকরির আবেদন করুন অনলাইনে

১৪

মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে সেই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

১৫

অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দিচ্ছে আরএফএল

১৬

ফের মা হতে চলেছেন ভারতী সিং

১৭

টিকা থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না যায় : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা 

১৮

কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, জানুন কী বলছে গবেষণা

১৯

ধোপাদিঘিতে মাছ মরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা

২০
X