আমজাদ হোসেন শিমুল ও শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ১১:৫৩ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩, ১২:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রাজশাহী সিটি নির্বাচন

আ.লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বেই উত্তপ্ত ভোটের মাঠ

আ.লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বেই উত্তপ্ত ভোটের মাঠ

রাত পোহালেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনে অনেকগুলো ওয়ার্ডে প্রধান দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভোটের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শঙ্কা করছেন ভোটাররা। আর ৮০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে পুলিশ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। নির্বিঘ্নে ভোট সম্পন্ন করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। মোট ১৫২টি ভোট কেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম, জাকের পার্টির এ কে এম আনোয়ার হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৬ জন।

৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরসহ ১৬টি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। দলীয় সিন্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় এই ১৬ কাউন্সিলর প্রার্থীকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটির ৩, ৮, ১০, ১৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪ জন করে নেতা ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর কামাল হোসেন, হাবিবুর রহমান, মো. শামিম ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল হক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম খান, রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক শাহীদ হাসান ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি হারুন-অর-রশিদ।

এই দুই ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কোনো প্রার্থী নেই। তবে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর শক্তির সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, মারপিট ও হুমকি-ধমকির মাধ্যমে শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত করে রেখেছে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. টনি, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ এবং সাবেক যুবলীগ নেতা আব্বাস আলী সরদার প্রার্থী হয়েছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সহসভাপতি মো. ভুট্টু, থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম এবং মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুদ রানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক আখতার আহমেদ, সমর্থক মখলেসুর রহমান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (পশ্চিম) সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবু প্রার্থী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। তারা হলেন- ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য শিহাব চৌধুরী এবং মহানগর তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকশেদ উল আলম।

বাকি ১৩টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুজন করে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও শাহ মখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক এবং মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন।

এরই মধ্যে এ ওয়ার্ডে কয়েকবার আশরাফ হোসেন এবং তৌহিদুল হকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আশরাফের সমর্থকেরা তৌহিদুলের কার্যালয় ও তার সমর্থকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ওই ওয়ার্ডে উত্তেজনা বিরাজ করায় মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল মমিন এবং মহানগর যুবলীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা প্রার্থী হয়েছেন। গত ১১ জুন মমিনের সহযোগীরা মাসুদের নারী সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় বলেও অভিযোগ করেন মাসুদ। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন ও মুরাদ আলী। ইতোমধ্যে আনোয়ারের সমর্থকেরা মুরাদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা নিযাম উল আযীম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর ছোট ভাই যুবলীগের সহ-সভাপতি গোলাম ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে নিযাম এবং ফারুকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। কাউন্সিলর প্রার্থী যুবমৈত্রীর রাজশাহী মহানগর সভাপতি মতিউর রহমান মতিকে অপর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘শনিবার আমার নির্বাচনী প্রচার মিছিলে রুবেল ও তার সমর্থকরা ককটেল হামলা চালায়। সে সবসময় আমার কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি থানা ও নির্বাচন কমিশনে কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি, কোনো প্রতিকার পাইনি।’

এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে চরম উত্তেজনার কারণে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের ১৪৮টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ৮০টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ৩, ৭, ৯, ১৪, ১৫, ১৬, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৬, ২৮,২৯ ও ৩০।

এ প্রসঙ্গে আরএমপি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে গোয়েন্দা নজরদারিবাড়ানো হয়েছে। সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুত আছি।’

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। অনিয়ম দেখলে প্রার্থীদের জরিমানা করছেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে আনসার,পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা সহযোগিতা করছে। আশা করছি, অত্যন্ত সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে রাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘সোমবার সকাল থেকে আমাদের ২৫০ সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাজশাহী সিটির ভোট গ্রহণ হবে।’

বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল থেকে ৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রাজশাহী মহানগরে টহল দিচ্ছে। নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে।’

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ এবং নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রদলের নতুন কর্মসূচি

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টে চাকরি, বয়সসীমা অনির্ধারিত

আ.লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়: রিজভী

৭০ শতাংশ পরিবেশ সাংবাদিক হামলা-হুমকির মুখে রিপোর্ট করেন : জাতিসংঘ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সৌদির কঠিন শর্তারোপ

বন্ধুর হয়ে দিচ্ছিলেন প্রক্সি পরীক্ষা, অতঃপর...

‘সানজিদার হাত ভাঙা, কান দিয়ে ঝরছিল রক্ত’

নোবিপ্রবিতে বি ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

যে কারণে আবারও ধোনির সতীর্থ হতে চান মোস্তাফিজ

নিহত সেনার মায়ের সঙ্গেও মিথ্যাচার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

১০

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবা

১১

‘শান্তির সংস্কৃতি’সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত

১২

হল-ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই কুবিতে ভর্তি পরীক্ষা

১৩

জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের টাকা কোথায়, জিজ্ঞাসা আমিনুল হকের 

১৪

ঢাকার ভেতরে আরেক ঢাকা

১৫

ছাত্র না হয়েও ছাত্রলীগ নেতা থাকেন ঢাবির হলে, করেন ইন্টারনেট ব্যবসাও

১৬

গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে উপস্থিতি ৯০ শতাংশ, ফল ৭২ ঘণ্টায়

১৭

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ভরসা ১০ গ্রামের মানুষের

১৮

‘ওরাল ক্যান্সার সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে’

১৯

প্রকাশ্যে দেওয়ান পরিবারের ‘মা লো মা’

২০
*/ ?>
X