বরিশালের আমতলী উপজেলার শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে এক এনজিওর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা লাপাত্তা। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) খবর পেয়ে শত শত গ্রাহক অফিসের সামনে ভিড় করেন। একপর্যায়ে তারা টাকা ফিরে পেতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রজাপতি এনজিওর নির্বাহী পরিচালক আবু ছালেহর বাড়ি তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেণ্ডামারা গ্রামে। গত জুন মাসে তিনি আমতলী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম রেজা টিটুর বাড়ি ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর তিনজন মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর, পৌরসভা ও কুকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কয়েকশ সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় কোটি টাকা আদায় করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সদস্যদের ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে আসতে বলেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে সদস্যরা অফিসে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও নির্বাহী পরিচালকসহ কর্মীদের খোঁজ না পেয়ে তাদের ফোনে কল দিলে বন্ধ পান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই শত শত গ্রাহক অফিসের সামনে ভিড় করেন। এনজিওটি ভুয়া বুঝতে পেরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একপর্যায়ে তারা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অফিসের বাড়িওয়ালা সেলিম রেজা টিটু স্থানীয়দের সহায়তায় মাহফুজা বেগম নামে এক মাঠকর্মী এবং নির্বাহী পরিচালকের বাবা আবু বক্কর তালুকদারকে তালতলীর গেণ্ডামারা গ্রাম থেকে ধরে এনে আটকে রাখেন। আবু ছালেহকে ধরিয়ে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কথা হলে মাহফুজা বেগম বলেন, এক মাস আগে চাকরি পেয়েছি। টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কিছুই জানি না। আবু ছালেহর বাবা আবু বক্কর তালুকদার বলেন, ছেলের সঙ্গে ১৫ বছর ধরে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা গ্রামের শাহ আলম মাস্টার বলেন, আমার ‘শুকতারা পুরুষ’ সমিতিকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৯৫ হাজার টাকা নেন আবু সালেহ। বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। একইভাবে ৮ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাগা গ্রামের লায়লা বেগমের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া পৌরসভা ও হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলাসহ বিভিন্ন গ্রামে দুই শতাধিক সমিতি গঠন করে চার-পাঁচ শতাধিক সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি।
এ বিষয় কথা বলতে সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ছালেহ তালুকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন, প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রজাপতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন