হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ মিয়া (৩৫)। প্রায় আট বছর আগে শখ করে ১২ হাজার টাকায় একটি বকনা (গাভি বাছুর) ক্রয় করেন। প্রথমে শখের বশে বকনা কিনলেও এক সময় খামারে রূপান্তরের নেশা চেপে বশে তার। কৃষি জমির ফসল বিক্রি ও হাঁসের ব্যবসার মুনাফার টাকা বিনিয়োগ শুরু করেন গরুর খামারটিতে। নিজের বিনিয়োগ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে একে একে আট বছরে তার খামারজুড়ে এখন ১২টি দেশি-বিদেশি প্রজাতির ষাঁড়, ১০টি গাভি ছয়টি বকনা (বাছুর) সহ প্রায় ত্রিশটি গরু। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বর্তমানে পরিপূর্ণ খামারের মালিক আশরাফ মিয়া। খামারের নাম রেখেছেন ছেলের নামে রাকিবুল গরু খামার।
তিনি জানান, নিজের জমিতেই ঘাস চাষ করে খামারের গো-খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন তিনি। নিজের বসত ভিটার সঙ্গেই চারটি সেমি পাকা ঘর তুলে সেখানে বৈদ্যুতিক পাখা ও আধুনিক সকল সুবিধাদিসহ তৈরি করছেন খামারের গরু রাখার বাসস্থান। ঈদুল আজহায় অন্তত ১০টি ষাঁড় বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আশা করছেন, ১০টি ষাঁড় বিক্রি করে আয় হবে ২০ লাখ টাকার বেশি।
আশরাফ মিয়া কালবেলাকে বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে হাঁসের ব্যবসা করছি। এখন গরুর খামারটিকে বড় করেছি। যদি সরকারি সহযোগিতা মিলত তাহলে খামারটিকে আরও উন্নত করতে পারতাম।
আশরাফ মিয়ার খামার দেখে উৎসাহী হয়ে একই গ্রামের সোহেল মিয়া কৃষি কাজ এবং ব্যবসার পাশাপাশি নিজের ঘরের পালিত তিনটি বকনা দিয়ে প্রায় বছর ছয়েক আগে শুরু করছেন একটি গরুর খামার। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৯টি ষাঁড়, ২০টি গাভি ও ১০টি বকনাসহ প্রায় ৪০টি গরু। নিজের জমিতে ঘাস ও ভুট্টা উৎপাদন করে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করেন তার খামারের গো-খাদ্য। এ ছাড়া খামারের গোবর থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব সার তৈরি করে সেই সার ব্যবহার করছেন নিজের কৃষি জমিতে। সোহেল মিয়া বলেন, আমি কৃষি কাজের পাশাপাশি ছোটখাট ব্যবসা করি। আশরাফ মামার খামার দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজের ঘরের পালিত তিনটি বকনা দিয়ে খামার শুরু করি। এখন পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছি। এখন আমি ডেইরি ফার্ম করার পরিকল্পনা করছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামার রয়েছে ৫১৭টি। এরমধ্যে দুগ্ধখামার রয়েছে ২৩০টি, মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ২৫৭টি এবং মহিষের খামার রয়েছে ৩০টি। আর খামারি রয়েছেন ৪৫৫ জন। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে উপজেলায় প্রস্তুত রয়েছে দুই হাজার ২৪০টি পশু। যার মধ্যে ষাঁড় ১ হাজার ৫০৯টি, বলদ ১৫৮টি, গাভি ২৩০টি, মহিষ ৫৭টি, ছাগল ২৭৫টি, ভেড়া ৬৮টি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মানছুরুল হক বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিকেরও বেশি খামারিদের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পর্যায়ক্রমে উপজেলার নতুন প্রতিটি খামারিদের প্রশিক্ষণসহ সব রকমের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন