ঝিনাইদহের শৈলকুপার আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পার হলেও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট বন্ধ হয়নি। হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের মিনগ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রাম। চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। আধিপত্য বিস্তারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বাদীপক্ষের লোকজন।
পুলিশ জানায়, ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য রঞ্জু ও বর্তমান ইউপি সদস্য রিপনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিরোধ মীমাংসায় গত রোববার শৈলকুপা থানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। গভীর রাতে মুচলেকা নিয়ে দুপক্ষের চারজনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরপর আরও দুজন মোটরসাইকেলে ফেরার পথে বাড়ি থেকে কয়েকশ গজ দূরে আবাইপুর ওয়াপদা গেটে পৌঁছলে রিপনের ওপর হামলা করা হয়। রাত ৩টার পর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয় রিপনের।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে শৈলকুপা থানায় হত্যা মামলা করেন রিপনের ভাই আহসানুল কবির। তবে প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও ইউনিয়নের কয়েকজনকে এতে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর গত পাঁচ দিনে মিনগ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আবাইপুর, লক্ষ্মণদিয়া ও গাঙ্গুটিয়া গ্রামে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ও প্রতিপক্ষের হামলা এড়াতে পুরুষরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। অনেক বাড়ি তালাবদ্ধ। নারীরাও ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
আসামিপক্ষের স্বজনদের অভিযোগ, মামলার বাদীপক্ষের লোক তুহিন, আতিয়ার, শহিদুল, মধু, হাসিবুল, পিকুল, নিজাম, নিমাইসহ অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে মিনগ্রামের বদিয়ার বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে তারা।
আজ শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সরেজমিন মিনগ্রামে দেখা যায়, আসামিপক্ষের বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই।
আসমা বেগম নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, গ্রামের নারী ও শিশুরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে- এ আতঙ্কে পুরুষরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
রিমা নামে আরেক নারী জানান, আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে দুটি ছাগল ও চারটি মুরগি নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। ঘরে এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ছিল, বিছানার বালিশের নিচে ২০ হাজার টাকা ছিল, সেগুলোও নিয়ে গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা সালাম জোয়ার্দ্দার বলেন, আসামির খোঁজে প্রতি রাতে বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ভয়ে পুরুষরা বাড়িতে থাকছেন না। পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য। আমরা চাই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। তবে নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি ঠাকুর দাস মণ্ডল কালবেলাকে জানান, এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। দিনরাত টহল চলছে।
মন্তব্য করুন