শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বেড়েছে চোরদের উৎপাত। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের খোয়া যাচ্ছে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন, ওষুধসামগ্রীসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারির অভাবে এমন পরিস্থিতি দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেবাপ্রার্থীরা।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, শয্যা সংকট থাকায় একদিকে যেমন রোগীর চাপ ও চিকিৎসা পেতে বিড়ম্বনা, অন্যদিকে হাসপাতালের অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো হওয়ায় রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালে ঢুকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে কেটে পড়ছে চোরচক্রের সদস্যরা।
ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১১ মাসের শিশু ফারিসতার মা ডলি আক্তার কালবেলাকে বলেন, হাসপাতালের আয়া ঝাড়ু দিয়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার ব্যাগটি গায়েব হয়ে গেছে। আমার ব্যাগের মধ্যে নগদ ২৬ হাজার টাকাসহ ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। হাসপাতালের কক্ষে সিসিটিভি না থাকায় দেখতেও পারছি না কীভাবে আমার ব্যাগটি চুরি হয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা তাসকিন নামের একমাসের শিশুর বাবা মোরশেদ সরদার বলেন, তিন দিন ধরে তাসকিনকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার ভোর রাতে আমার পাশে থাকা ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা, তাসকিনের প্যামপাস ও দামি কিছু ওষুধ নিয়ে গেছে চোর। গ্রাম থেকে চিকিৎসা করাতে অল্প কিছু টাকা নিয়ে আসি। এভাবে যদি চোররা সবকিছু নিয়ে যায় আমরা কীভাবে চলব।
আছিয়া বেগম নামের রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার নাতিন নিয়ে চিকিৎসা করাতে সদর হাসপাতালে আসছি বাইরে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই। এখানে আসার পর গত কাল ভোররাতে আমার ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ। এখন টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছি না।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতু আক্তার বলেন, ভোরে হাসপাতাল থেকে চারজন রোগীর স্বজনদের টাকা পয়সা ও মালামাল খোয়া যাওয়ার বিষয়ে শুনেছি। হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের মূল্যবান জিনিসপত্র তাদের নিজ দায়িত্বে রাখার কথা। হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে তবে সবগুলো সচল নয়। হয়তো ওই ওয়ার্ডের সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না।
সিসিটিভি অকেজো হওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা সকল রোগীর ও তাদের লোকজনকে মালামাল নিজ দায়িত্বে নিরাপদে রাখার জন্য বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ভোরের দিকে চোররা রোগীর লোক সেজে চুরি করে।
আয়ার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, না দেখে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া ঠিক না। যদি কেউ চোর ধরতে পারে সেক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাসপাতালে আরও বেশি সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চুরির বিষয়ে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান কালবেলাকে বলেন, হাসপাতালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়কের। উনি একাই ওটা সামলান, হাসপাতালের উপরে আমার কোনো কর্তৃত্ব নেই। হাসপাতালে লোকবলের অভাব আছে কী না, বা সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কী না সব পরিকল্পনা তার। আমি শুধু তাকে পরামর্শ দিতে পারি।
মন্তব্য করুন