ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে বগুড়া থেকে বিভিন্নভাবে রওনা হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সড়ক পথে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি ও আওয়ামী লীগের হামলার আশঙ্কায় নদী ও রেলপথ বেছে নিয়েছেন তারা। তবে এখনও কেউ বাধার সম্মুখীন হয়নি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত সংগঠনটির অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী বগুড়া ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৌশল অবলম্বন করে গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের দলবদ্ধভাবে না যাওয়া, হোটেল-মেসে না থাকা, অ্যান্ড্রোয়েড ফোন না ব্যবহার করাসহ নানারকম দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী ট্রাকে করেও ঢাকামুখী হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২ উপজেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে অংশ নিবেন। এ ছাড়াও উপজেলা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। আর দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও বগুড়া থেকে অন্তত ১০ হাজার সমর্থক উপস্থিত থাকবেন। এদের মধ্যে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন গার্মেন্ট, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বগুড়া বাসিন্দারা রয়েছেন। বগুড়া জেলা বিএনপি থেকে তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাওয়া শুরু করে। তবে অনেকে শুক্রবার ও মহাসমাবেশের দিন শনিবার ঢাকায় যাবেন। তাদের কেউ কেউ রাজশাহী ও সৈয়দপুর থেকে বিমানপথে যাত্রা করবেন। শহরের ঠনঠনিয়া বাসট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় স্বাভাবিকের চাইতে ঢাকামুখী মানুষদের চাপ অনেক বেশি। সবগুলো বাসেই যাত্রী দিয়ে পরির্পূণ। শনিবার সকালের ঢাকামুখী সব বাসের আগাম টিকেট কাটা হয়েছে।
বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবু হাসান বলেন, দুপুরের দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছিলাম। এখন টাঙ্গাইল পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। কিছু নেতাকর্মী সঙ্গে আছেন। দলীয় নির্দেশনা মেনে ঢাকায় যাচ্ছি।
একতা বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এস আলম বলেন, শুক্রবার ও শনিবার সিট সব বুকিং হয়েছে। সমষ্টিগত কেউ টিকেট কাটেছে না, তবে চাপ অনেক। পরিবহন বন্ধ নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা নেই। সব স্বাভাবিক আছে। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে বাসের মতো উপচেপড়া চাপ সৃষ্টি হয়েছে রেলপথেও। বগুড়ার সান্তাহার রেলওয় জংশন থেকে প্রতিদিনি আটটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় যায়। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত দুদিন আগে থেকে দ্বিগুণ লোকজন ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকামুখী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার প্ল্যাটফর্মে আসার পরেই হুমড়ি খেয়ে লোকজন উঠতে শুরু করেন। ট্রেনের সাধারণ বগিগুলোর পাশাপাশি এসি বগিতেও একরকম তিল ধারনের জায়গা ছিল না। এই জংশন দিয়ে বগুড়ার পাশাপাশি নওঁগা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরাও ঢাকায় যাচ্ছেন।
সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনে ঢাকামুখী ট্রেনে যাত্রী চাপ বেড়েছে। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
ট্রেন ও সড়ক পথের মতো নদী পথও সরগরম। বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদী দিয়ে জামালপুর হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এই পথে এখন পর্যন্ত দুই উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় গিয়েছেন। আরও অনেকে যাবেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, ঢাকায় মহাসমাবেশে বগুড়া থেকে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে। এখনও তাদের কোনো নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। বাধাহীনভাবেই সবাই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছেন। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সবকিছু মনিটর্রিং করা হচ্ছে।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে জেলা পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছে। গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয় করে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে দমন করা হবে।
মন্তব্য করুন