‘ছোটবেলায় রোবট দেখে খুব ইচ্ছা হয় আমি একটা রোবট তৈরি করব। স্কুলে যাওয়ার সময় থেকে টিফিন না খেয়ে টাকা জমাতে থাকি। এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হয়। এর পর থেকে রোবট তৈরি কাজ শুরু করি। প্রায় এক বছর সময় লাগছে এই রোবটটি তৈরির কাজ সমাপ্ত করতে। খরচ হয় ৮০ হাজার টাকার মতো। রোবটটির নাম রিবা।’ এই কথাগুলো বলল বরিশার জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের মো. ইব্রাহিম সরদারে ছেলে ইরান সরদার।
ইরান সরদার ২০২১ সালে সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান শাখায় পাস করেন। চলতি বছর মাহিলারা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। তার স্বপ্ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আরও ভালো কিছু আবিষ্কারের। ইরান সরদাররা তিন ভাই। ইরান সরদার সবার ছোট। তার বড় ভাই ইমরান সরদার সরকারি গৌরনদী কলেজে অনার্সের শিক্ষার্থী, মেজভাই ইমর সরদার সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগদান করেছেন। পিতা কাতার প্রবাসী আর মা গৃহিণী।
রোবট রিবা আবিষ্কারক ইরান সরদার বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পূর্ণ রোবট রিবা। সে মানুষের মতো আচরণ করতে পারে। চোখের পলক ফেলতে পারে, বাংলা ও ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষাতেই কথা বলতে পারে। এ সময় মুখ নাড়ায়, মাথা ঘুড়িয়ে সবাইকে দেখতে পারে। রিবা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর নামসহ যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। রোবট রিবার সামনে কোনো লোক আসলে রোবটটি তাকে অটোমেটিক সালাম দিয়ে তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে পারে। পাশাপাশি বাংলা ভাষায় জিজ্ঞেসও করতে পারে রোবটটি। রোবট রিবা পরিবেশবান্ধব রোবট। যে কি না সূর্যের আলো থেকে সোলারের মাধ্যমে নিজে নিজে চার্জ করে নিতে পারে। তাতে রোবটটি ব্যবহার করতে খরচ হয় না। অফিস-আদালতে, শিল্প-কারখানার যে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে যদি রোবট রিবাকে রাখা হয়, সেখানে আগুন লাগলে মানুষের মতো আশপাশের লোকজনকে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলা ভাষায় ডাকবে এবং এলাম বাজিয়ে সতর্ক করে দিতে পারে। রোবট রিবা মেডিকেল সেবা দিতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা সেন্সরের মাধ্যমে অটোমেটিক পরীক্ষা করে বলে দিতে পারে এবং সেই তাপমাত্রা কত ডিগ্রি সেলসিয়াস তা ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করে বলে দিতে পারে। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য রোবটটি অপচয় ছাড়া পরিমাণ মতো অটোমেটিক হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে দিতে পারে। রোবটটি একজন ডাক্তার, শিক্ষক ও কৃষকের পরামর্শক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ব্যক্তিগত সহকারীর মতো বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। শিশুদের বিনোদনও দিতে পারে।
ইমরান সরদার আরও বলেন, সরকারের সহযেগিতা পেলে আরও নতুন নতুন ডিভাইজ তৈরি করতে পারব। আমি অর্থ অভাবে নতুন কোনো কাজে হাত দিতে পারছি না।
এ ব্যাপারে আগৈরঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই মেধাবী রোবট তৈরি করা শিক্ষার্থীকে সরকারিভাবে কী ধরনের সহযোগিতা করা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতার চেষ্টা করব। সে যাতে আরও নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারে, যা দেশেরে ও জনগণের উপকারে আসে।
মন্তব্য করুন