শিল্পী না হয়েও প্রতারণা করে মা-স্ত্রীসহ পরিবারের চারজন নিচ্ছেন সরকারি অনুদান। এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বরগুনার বামনা উপজেলার বড় তালেশ্বর গ্রামের কামরুজ্জামান লিটন নামে এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, সচ্ছল শিল্পীদের বার্ষিক অনুদান প্রদানের জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তালিকা প্রেরণ করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। সেই তালিকায় বেশ কয়েকজন ভুয়া শিল্পী সন্দেহ হওয়ায় ওই মন্ত্রণালয় থেকে ৮ জনের বিষয়ে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিল করতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ জনকেই সঠিক শিল্পী হিসেবে প্রতিবেদন পাঠানো হয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। তবে ৮ জনের মধ্যে ৪ জন প্রকৃত শিল্পী হলেও বাকি ৪ জনের ব্যাপারে সাংস্কৃতিক কর্মীদের যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
এদের মধ্যে কামরুজ্জামান লিটন মোল্লা ও তার স্ত্রী ফিরোজা খানমকে শিল্পী হিসেবে প্রতিবেদন দিয়ে বামনার ইউএনও অন্তরা হালদার স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়। বাবা আ. লতিফ মোল্লার নামও ছিল অনুদানের তালিকায়। কিন্তু কয়েক দিন আগে লতিফ মোল্লা মারা যাওয়ায় প্রতিবেদনে তার নাম মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে কামরুজ্জামান লিটনের মা ফরিদা বেগম ইতিমধ্যে অনুদান পেয়েছেন। অথচ তারা কেউই শিল্পী না।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৮৫-৯০ সালের দিকে স্কুল-কলেজে থাকতে নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারপর থেকে আর কিছু করিনি। আমি তো অবসরপ্রাপ্ত শিল্পী। তৃণমূল মানুষের সংগঠন- তৃমাস নামে তার একটি এনজিও রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ এনে তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেন। কিছু দিন পূর্বে আইসিটি বিভাগ থেকে আটটি কম্পিউটার পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, কামরুজ্জামান লিটন এলাকায় এ ধরনের কোনো (সাংস্কৃতিক) কার্যক্রম করেননি। তবে মন্ত্রণালয়ে তার যোগাযোগ থাকায় বিভিন্ন সংগঠনের নামে অনুদান আনার খবর পাওয়া যায়।
একটি লাইসেন্সধারী বন্দুকই শক্তি
কামরুজ্জামান লিটনের একটি লাইসেন্সধারী বন্দুক রয়েছে। সেই বন্দুক দিয়ে এলাকায় মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গলায় বন্দুক ঝুলিয়ে প্রায়ই দিনে ও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। যা আইন অনুযায়ী অন্যায়। এই অস্ত্র দিয়ে সরকার পক্ষের লোকদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকার সাধারণ মানুষ, নিরীহ মুরুব্বিরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিটন বলেন, লাইসেন্সধারী বন্দুকই আমার শক্তি।
অস্ত্রের অপব্যবহার করায় বামনা উপজেলা থানা পুলিশ বন্দুকটি নিয়ে আটকে রাখে। অনেকদিন পরে পুলিশ প্রশাসনকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে আবারও বন্দুকটি নিজের কাছে নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একসময় লিটন ডাকাতিতে সহযোগিতা করত। রাস্তাঘাটে মানুষজনকে মারধর করত। এলাকার গণ্যমান্যরাও তাকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। এখন এনজিওর আড়ালে নানা ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছে সে।
লিটনের বাড়ি বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ জানান, লিটনের একটি লাইসেন্সধারী বন্দুক রয়েছে। আমি এককথায় বলব সে মানুষ হিসেবে মোটেও ভালো না। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন এলেই সে নির্বাচন করে।
এসআই দেবাশীষ হাওলাদার জানান, কামরুজ্জামান লিটনের বন্দুকের লাইসেন্স নম্বর ১২৮। তিনি ২০২২ সালে নিয়ে গেছেন এরপর আর জমা দেননি। ২২ সালে কেন থানায় জমা রাখা হয়েছিল তা আমার জানা নেই। বন্দুকের অপব্যবহার করলে জেলা প্রশাসক চাইলে লাইসেন্স বাতিল করতে পারেন।
বামনা থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে তার বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। হয়তো ভয়ে কেউ কথা বলছে না। তার বিষয়ে আমরা খোঁজ নিব।
সুবিধা আদায়ে জাতীয় নির্বাচন এলেই প্রার্থী হন
এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ রাজনীতির আলোচিত চরিত্র। তার দলের প্রার্থী হিসেবে বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনে কামরুজ্জামান লিটন নির্বাচন করবেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। এনডিএম সরকারবিরোধী জোট বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগীর বিভিন্ন এলাকার আড্ডায় আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও ন্যক্কারজনক মন্তব্য করতে শোনা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, এই নামের কাউকে আমি চিনি না। আমার দলের সঙ্গে কামরুজ্জামান লিটন ওরফে বেল্টু লিটন বলতে কেউ নাই। আমরা নির্বাচনেই যাব না, সেখানে কীসের পোস্টার?
মন্তব্য করুন