চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দুরুল হোদা (৪০) নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে স্ত্রী-সন্তানের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার (২৫ জুন) উপজেলার ঢুলঢুলিপাড়া এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
দুরুল হোদা উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের মিরাটুলি বাবুপুর গ্রামের চাঁন মণ্ডলের ছেলে এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
নিহতের পরিবার জানায়, নিহত দুরুলের রয়েছে তিন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে (১৫) নবম শ্রেণি ও মেজো ছেলে (১১) মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ছাড়া রয়েছে দেড় বছর বয়সী আরও একটি মেয়ে।
দুরুল হোদার শ্বশুর আনারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে মিরাটুলি বাবুপুর গ্রামের বাবু ঝাপড়ার নেতৃত্বে ১০টা মোটরসাইকেলে প্রায় ২০ জন ও হেঁটে বাড়ির পেছন দিয়ে আরও ১০ জনের একটি দল অস্ত্র হাতে আমার বাড়ি ঘিরে ফেলে। এরপর আমার বাড়িতে পেছনের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে লুটপাট করে এবং আমার মেয়েসহ ছোট বাচ্চাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় আমাকেও গাছের ডাল দিয়ে পেটাতে থাকে তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে আমার জামাই পাশে আমার ভাই মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে আমার বাড়িতে দুরুলকে না পেয়ে মনিরুলের বাড়ির দরজা ভেঙে তার বাড়িতে প্রবেশ করে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, তাদের দেখে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে যেতে সাহস পাইনি।
ঘটনার অপর প্রত্যক্ষদর্শী দুরুল হোদার চাচি শাশুড়ি তাজকেরা বেগম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দেখে, ভয়ে আমরা বাড়ির সব দরজা বন্ধ করে দিই। এরপর তারা দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি আসবাব ও দরজা ভাঙতে থাকে। এ সময় দুরুলকে বাঁচাতে একটি ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রাখি। সেই ঘরে ঢুকে খাটের নিচ থেকে দুরুলকে টেনে বের করে কোপাতে থাকে।
চাচি শাশুড়ি আরও বলেন, এ সময় সন্ত্রাসীরা বলতে থাকে ‘তোকে মেরে ফেললে কিছুই হবে না, নেতার নির্দেশ আছে’। আমাদের কিছুই হবে না। পরে বাড়ির পেছনে নিয়ে চায়নিজ কুড়াল ও হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে লোকজনের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় দুরুলের মৃত্যু হয়। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় মনিরুল ইসলামের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
দুরুল হোদার স্ত্রী তোহমিনা বলেন, আমার স্বামী একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। কয়েক দিন আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে সন্ত্রাসীদের ভয়ে, নিজ বাড়ি বাবুপুরে যেতে পারিনি আমরা। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছি বাবার বাড়িতে। তারপরও খুন হতে হলো আমার স্বামীকে। এখন তিন শিশুসন্তান নিয়ে জীবন বাঁচাব কীভাবে।
এদিকে সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হলে, পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
গত ১৩ এপ্রিল মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি আলম হোসেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে গতিরোধ করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাবুল আলী শিবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ নম্বর আসামি ছিলেন দুরুল হোদা।
মন্তব্য করুন