জন্ম থেকে দুটি হাত নেই, ডান পাটাও আকারে অন্যটার চেয়ে ছোট। পা দিয়ে লিখে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অদম্য সোনিয়া আক্তার। তার স্বপ্ন ভবিষ্যতে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া। এ যেনো এক ডানাহীন উড়তে চাওয়া অদম্য পাখির গল্প।
সোনিয়া ২০২০ সালে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮২ এবং ২০২২ সালে সাভার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এখন সাভার সরকারি কলেজেই সমাজকর্ম বিভাগে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন।
সোনিয়া ঢাকার সাভার উপজেলার ব্যাংক কলোনী এলাকার শাহাদাত হোসেন ও আকলিমা আক্তারের মেয়ে।
তার বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় পোশাক শ্রমিক। মা আকলিমা আক্তার অন্যের বাড়ির গৃহকর্মী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সোনিয়া সবার বড়। ছোট ভাই রাকিব হোসেন দশম শ্রেণিতে পড়ে ও ছোট বোন তানিয়া আক্তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
সোনিয়ার এই সংগ্রামী জীবন নিয়ে তার মা আকলিমা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ‘২০০২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোনিয়ার জন্ম। ওর জন্মের পর মানুষের কটু কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারও বোঝা হতে দেব না। ছয় বছর বয়স থেকেই ওর পায়ে পেন্সিল দিয়ে পা দিয়ে লেখানোর চেষ্টা শুরু করি। এরপর পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করালাম। এরপর একটি মাদ্রাসা থেকে আমার মেয়ে পিএসসি পরিক্ষা দেয়। তার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ইচ্ছা একজন সত্যিকারের সফল মানুষ হওয়ার। ছোটবেলায় আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সেটি সম্ভব নয়। তাই আমার ইচ্ছে লেখাপাড়া শেষ করে আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে দেশের একজন সফল নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব।’
সোনিয়াকে নিয়ে তার প্রিয় শিক্ষক সাভার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমরুল হাসান বলেন, ‘সোনিয়া প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই। তবে সে অত্যন্ত মেধাবী। পা দিয়ে লিখেই আমাদের কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এখন আমাদের ক্যাম্পাসেই স্নাতকে অধ্যয়নরত। সে আমাদের গর্ব। একটু সহায়তা পেলে সোনিয়া ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
মন্তব্য করুন