দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের খবরে মৌসুমের স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ দামে তা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে কোথাও কোথাও কমতে শুরু করেছে এক লাফে বেড়ে যাওয়া দাম। এ পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক সময়ের চেয়ে আগে মাঠের পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। এতে কৃষক ভালো মূল্য পেলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ পড়েছে। কিন্তু একই সময় বিক্রেতা এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের কৃষক মো. জসিমউদদীন মাদবর কালবেলাকে বলেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ-রসুনে লোকসান হয়। এবার বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছি। কারণ, পরে যদি দাম কমে যায়। আর রসুন তো পানিতেই পচে গেছে।
কৃষক আমির হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ উঠিয়েছি। বাজারে তিন মণ পেঁয়াজ সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি।
তিনি আরও বলেন, এখনও তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এমন দাম থাকলে সব পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করব। ১৫-২০ দিন পর এই পেঁয়াজ উঠালে এক বিঘাতে ১০-১২ মণ পেঁয়াজ বেশি হবে। তবে এমন দাম হয়তো আমরা তখন পাব না। যে কারণে ইচ্ছা না থাকার পরও অসময়ে অপরিপক্ব কাঁচা পেঁয়াজ উঠাতে হচ্ছে।
এই কৃষক কালবেলাকে আরও বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি এর আগেও হয়েছে। সিন্ডিকেট না ধরে কৃষকের কাছে এলে কী হবে। পেঁয়াজের কারসাজি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। আইনের আওতায় সিন্ডিকেট গডফাদারদের নিয়ে আসতে হবে। আমরা চাষি চাষ করি, বিক্রি করি। এখন দাম ভালো তাই বিক্রি করে দিচ্ছি।
এ সময় আরেক কৃষক জমিরউদ্দীন সরকার বলেন, প্রথম দফায় পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলাম। দিন দিন দাম কিছুটা কমে আসছে বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে বেশি দামের আশায় দ্রুত তুলে বিক্রি করছেন। গত সোমবার চার হাজার টাকায় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের শুরু থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়। রোপণের ১০০ বা ১১০ দিন বা তিন মাস পর পেঁয়াজ পেকে পরিপক্ব হয়।
শরীয়তপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বর্তমান বাজারমূল্য বেশি থাকায় অধিকাংশ কৃষক আগে ভাগে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। পেঁয়াজ তোলা শেষে ওই জমিতে হালি পেঁয়াজ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে কিছু দিন পর পেঁয়াজটা উত্তোলন করলে ফলন আরও ভালো হতো। তবে আগে ভাগে পেঁয়াজ তোলায় উৎপাদন কিছুটা কম হলেও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে তারা। তবে আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে পরিপক্ব হলে পেঁয়াজ উত্তোলন করেন।
মন্তব্য করুন