দুই দশকেরও বেশি সময় পর প্রতিমন্ত্রী পাচ্ছে পার্বত্য খাগড়াছড়িবাসী। বুধবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে ডাক পেলেন খাগড়াছড়ি আসন থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা জানানো না হলেও দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা মনে করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
এদিকে দুই দশক পরে প্রতিমন্ত্রী পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নির্বাচনী এলাকা খাগড়াছড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত সৎ ও সজ্জ্বন এই সংসদ সদস্যকে প্রতিমন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কৃপণতা করেননি তার নির্বাচনী এলাকার লোকজনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রতিমন্ত্রী করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী খাগড়াছড়িবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছেন মন্তব্য করে খাগাড়ছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে তিনি বারবার খাগড়াছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি অনেক উদার। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নিজেকে খাগাড়ছড়ির সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া মনে করেন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে। খাগড়াছড়িতে উন্নয়নসহ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় হবে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিরন জয় ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের মতো খাগড়াছড়ি মন্ত্রিত্ববঞ্চিত। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রতিমন্ত্রী করার মাধ্যমে খাগড়াছড়িবাসীর দুঃখ ঘোচালেন প্রধানমন্ত্রী।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রতিমন্ত্রী করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সিএইচটি নারী হেডম্যান-কারবারী নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই লাখ বিশ হাজারেরও বেশি ভোটে টানা তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাহাড়ের এ পোড় খাওয়া রাজনীতিক। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে মন্ত্রী করার দাবি ওঠে। তবে তখন তাকে মন্ত্রী করা হয়নি।
তবে ২০১৭ সালের শেষ দিকে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি টাস্কফোর্সের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের পর খাগাড়ছীড়র তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্প রঞ্জন চাকমাকে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। এরপর রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এবং বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশ্যেশিং-ই তিন পার্বত্য জেলার বিশেষায়িত এই মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার মানে গেল দুই দশকে খাগড়াছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রী পায়নি খাগাড়ছড়িবাসী।
মন্তব্য করুন