কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় জমে উঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করা পৌষসংক্রান্তির মেলা। তীব্র শীত উপেক্ষা করেও মেলায় ভিড় করছেন নানা বয়সের মানুষ। ক্রেতা বিক্রেতায় জমে উঠেছে বেচাকেনা। এ ছাড়াও মেলা দেখতে এসেছেন নানা বয়েসী দর্শনার্থী।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল এলাকায় এ মেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ জনপদে।
জানা গেছে, প্রতি বছরই এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় এই পৌষসংক্রান্তির মেলা। যুগ যুগ ধরে স্থানীয়রা এই মেলার আয়োজন করে আসছে। এই মেলা উপলক্ষে স্থানীয়দের মধ্যে দুদিন ধরে চলে আনন্দ উৎসব। এই মেলা ঘিরে আত্মীয়তাও বেড়ে যায়। ঘরে ঘরে চলে ঈদের মতো উৎসবের আমেজ। মেলার জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা ও মেলায় নানা পণ্যের পসরা সাজানো দোকানিরা। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকেও নানা বয়সের মানুষ এ মেলায় আসেন। শীতকালীন এই মেলায় বসে শিশুদের খেলনাসামগ্রী, নানা ধরনের পিঠা, কাঠের তৈরি নানা রকমের পণ্য, নানা জাতের মাছ, নানা রকমের প্রসাধনীর বিরাট হাট। দুদিন ধরে চলে এ মেলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঘের তীব্র শীত উপেক্ষা করে মেলার ভ্রাম্যমাণ রকমারি দোকানগুলোতে ভিড় করেছেন নানা বয়সের মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। মেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার পছন্দমতো জিনিসপত্র কিনছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কেনা হচ্ছে নানা রকমের খেলনাসামগ্রী। নানা বয়সের নারীরা কিনছেন প্রসাধনী। পিঠার দোকানগুলোতে সাজানো হয়েছে নানা রকম গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠা। ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও মেলায় এসেছে নানা বয়েসী দর্শনার্থী।
মেলা দেখতে আসা স্থানীয় মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাইদুর রহমান জিতু কালবেলাকে বলেন, মেলা বাঙালি জাতির উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। মেলায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলা ঘটে। এই মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করতে সবান্ধবে চলে এসেছি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কল্পবাস এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন। তিনি মেলায় এসেছেন ৪ বছর বয়েসী তার ছেলে ইমনকে নিয়ে। ছেলের জন্য কিনেছেন খেলনা গিটার। বাড়িতে তার ১৪ বছর বয়েসী এক মেয়ে আছে।মেয়ের জন্য কিনেছেন চুল বাঁধার ফিতা ও ক্লিপ। আর বাড়ির সবার জন্য কিনেছেন গরম গরম গুড়ের জিলিপি। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ছেলেটার আবদারে মেলায় এসেছি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমিও আমার ছেলের মতো বাবার হাত ধরে এই মেলায় আসতাম।
মেলায় শিশুদের খেলনাসামগ্রী বিক্রি করতে আসা মরতুজ আলী কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন মেলায় ও ওরশ মাহফিলে আমরা ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করি। বিশেষ করে মেলার বিষয়ে কবে কোন তারিখে কোথায় মেলা তা আমরা মনে রাখি। যথাসময়ে মেলার স্থানে উপস্থিত হয়ে দোকান সাজিয়ে বসি। এই ব্যবসা করেই আমরা আমাদের সংসার চালাই। এই অঞ্চলের মেলাগুলোর মধ্যে এই পৌষসংক্রান্তির মেলা অন্যতম। অনেক মানুষের ঢল নামে এই মেলায়, বিক্রিও হয় বেশি।
মন্তব্য করুন