ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিকলে বাঁধা রাকিবের জীবন

হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার বাবা চার বছর ধরে দুই পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখছেন নিজ সন্তানকে। ছবি : কালবেলা
হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার বাবা চার বছর ধরে দুই পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখছেন নিজ সন্তানকে। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ১১ বছরের শিশু প্রতিবন্ধী রাকিব হোসেনকে চার বছর ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার বাবা। অসহায় বাবা অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ছেলের। গত ৪ বছর ধরে পায়ে শিকল পড়া অবস্থায় দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে শিশুটি।

উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের গছিডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন এর ছেলে রাকিব। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার বাবা চার বছর ধরে দুই পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখছেন নিজ সন্তানকে। এদিকে অর্থের অভাবে রাকিবের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। ফলে রাকিবের মানসিক প্রতিবন্ধকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু রাকিবের পায়ে লোহার শিকল ও তালা লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড শীতে উদোম গায়ে সারাদিন গাছের চারপাশে ঘুরছে। মানুষ দেখলেই শিকল দেখিয়ে খুলে দেওয়ার ইশারা করে সে।

এই অমানবিক ও নির্মম দৃশ্য দেখে সকলের কষ্ট হলেও তার হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটির চিকিৎসা করাতে পারেননি দিনমজুর রুহুল আমিন। সন্তানটি যাতে হারিয়ে না যায়, সে কারণে শেকল দিয়ে তাকে বেঁধে রেখেছেন বলে জানান তিনি।

শিশুটির পরিবার জানায়, রাকিব প্রায় ৫ বছর আগে বাড়ির সামনে বড় রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়। চিকিৎসায় মোটামুটি সুস্থ হলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রাকিব। এরপর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সে আর ফিরে আসতে পারত না। একাধিকবার হারিয়েও গেছে। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় খুঁজে এনে বাড়িতে বেঁধে রাখেন তার বাবা। শিকলে বাঁধা অবস্থায় তাকে খাইয়ে দিতে হয়। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সে কথা বলতে পারে না বলে জানায় তার পরিবার।

এদিকে প্রতিবন্ধী ছেলের পাগলামীতে অতিষ্ঠ হয়ে তার মা স্বামীর সংসার ও ছেলেকে ফেলে তালাক নিয়ে চলে গেছেন। অন‍্যের সংসারে তার মা ভালো থাকলেও ভালো নেই রাকিব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, এর আগে তারা রাকিবের শিকল খুলে দিয়েছিল। কিন্তু বারবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে পায়ে শিকল পরিয়ে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, গত ৪ বছর ধরে শিশুটিকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছেলেটির কষ্ট সহ‍্য করার মতো না। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।

রাকিবের বাবা রুহুল আমিন জানান, প্রতিদিন সকালে ছেলেকে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে আমি কাজে যাই। বিকেলে কাজ থেকে ফিরে ছেলেকে ঘরে নিয়ে আসি। রাতের অন্ধকারে একটু ঘুমায়। অভাবের সংসারে কাজ না করলে পরিবারের খাবার জোটে না। দিন এনে দিন খাই। আমার ছেলের চিকিৎসা করাব কীভাবে?

পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, শিশুটির নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তাকে সুচিকিৎসা দিলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তাই শিশুটির চিকিৎসায় সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারো দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১০

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১১

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১২

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৩

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৪

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৫

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৬

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৭

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৮

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৯

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

২০
X