রাজশাহীতে ঘুষি মেরে আনসার-ভিডিপির সদস্য মাইনুল ইসলামকে (৪৫) হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আটক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে শুক্রবার সকালে নিহতের স্ত্রী আলম আরা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের নামে রাজশাহী গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত মাইনুল ইসলাম রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাঙ্গনপুর পালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
তাকে ঘুষি মারার অভিযোগে ঘটনার পর পরই রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রকে আটক করা হয়েছিল। পরে আলম আরার দায়ের করা হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ওই ছাত্র ১৭ বছর বয়সী। রংপুরের পীরগাছায় তার বাড়ি। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ মল্লিক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে মাইনুলকে ঘুষি মারা হয়।
ঘটনার সময় ছিলেন আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, রাতে স্টেশনের প্লাটফর্মে ডিউটির সময় তাদের ইনচার্জ হিসেবে ছিলেন রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু শাহাদত। পিসি দেলোয়ার হোসেন ও এসআই আবু শাহাদত স্টেশনের ৪ ও ৫ নম্বর প্লাটফর্মে ছিলেন। এখানে কয়েকজন তরুণকে অস্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে এসআই শাহাদত তাদের চলে যেতে বলেন।
এ নিয়ে এসআইয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ায় ওই তরুণরা। একপর্যায়ে তারা গালাগালও শুরু করে। তখন এসআই শাহাদাত এই বখাটেদের ধরার জন্য আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেন। এরপর ওই তরুণরা স্টেশনের ৩ ও ৪ নম্বর প্লাটফর্ম দিয়ে পালানোর সময় আনসার সদস্যরা তাদের ধরতে যান। তখন আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামের বুকে ঘুষি মারে পলিটেকনিকের ওই ছাত্র।
এতে মাইনুল ইসলাম পড়ে যান। আর অন্য আনসার সদস্যরা অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন।
ঘটনার পর মাইনুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে তার ইসিজি করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে শুক্রবার দুপুরের পর রামেকের মর্গে ময়নাতদন্তের পর নিহতের মরদেহ স্বজনদের দেওয়া হয়।
এ সময় নিহত মাইনুল ইসলামের ভগ্নিপতি মো. আলাল বলেন, মাইনুলের দুটি ছেলে আছে। তারা পড়াশোনা করছে। তবে উপার্জন করার মতো তাদের আর কেউ নেই। তার সংসারটা ভেঙে গেল। যেহেতু তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় খুন হয়েছেন, তাই বাহিনী কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারটিকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দাবি জানান তিনি।
রাজশাহী জিআরপি থানা পুলিশের ওসি গোপাল কুমার কর্মকার বলেন, আনসার সদস্য নিহতের ঘটনায় জিআরপি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন