চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কুমিরা রেলস্টেশন সংলগ্ন প্রায় পাঁচ একর রেলের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এসব জমিতে থাকা রেলওয়ের কর্মচারীদের ঘর ভেঙে বাইরে থেকে মাটি এনে উঁচু করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দখলকৃত জমি উঁচু করে ভরাট করায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, টি কে গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী স্টিল মিলসের পাশের রেলওয়ের জমিতে এ দখল চলছে। মহসিন রেজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই প্রভাবশালী এ কাজ করাচ্ছেন।
স্থানীয় কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ চৌধুরী বলেন, এ জমিতে প্রায় ৩০০-৪০০টি পরিবার ছিল। হঠাৎ এক রাতেই মহসিন রেজা ও মোহাম্মদ আলী এদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ করে দেন। এরপর জমিটি যেভাবে উঁচু করে ভরাট করছে তাতে বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে জলাবদ্ধতা হতে পারে। হুমকির মুখে পড়তে পারে রেল চলাচলও।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ দখল বাণিজ্য করা হচ্ছে। কর্ণফুলী স্টিল মিলের পেছনে একটি শহীদ মিনার আছে, সেটিও দখলদাররা ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করছে বলে শুনেছি।
রেলওয়ে আবাসিকে বসবাসরত স্বপ্ন রানী বলেন, আমার বাবার চাকরির সুবাদে আমরা এখানে থাকি। আমাদের বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে দখলদাররা। রাতের বেলায় টিনের মধ্যে বড় বড় পাথর মারে এবং বিভিন্ন ধরনের লোক এসে আমাদেরকে হুমকি দেয় বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
রেলওয়ে সার্বিক কর্মকর্তা টি আই নাসির উদ্দিন বলেন, স্টেশনের কিছু জায়গায় আমি লিজ নিয়েছি, কিন্তু মহসিন রেজা আমার থেকে ওই জায়গা জোরপূর্বক চিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার (৬ ফেরুয়ারি) রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ২৫ জনের একটি টিম ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন। এ সময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দেখে দৌড়ে পালিয়ে যান দখলদাররা। আগামী সপ্তাহে দখলকারীদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।
ডিআরএম চট্টগ্রাম রেলওয়ের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি । এই সময় রেলওয়ের ২৫ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দেখে দখলদাররা দৌড়ে পালিয়ে যায়। অবৈধ দখল কর্মযজ্ঞ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার (১৪ ফেরুয়ারি) দখলকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানা যাবে।
দখলকারি এমএএস অ্যাগ্রিকালচারের স্বত্বাধিকারী মো. মহসিন রেজা বলেন, এখানে আমার সাত একর জমিকৃষি লিজ নেওয়া আছে। তার মধ্যে দুই একর আমার নামে। বাকি পাঁচ একর অন্যদের কাছ থেকে নিয়েছি। আমি এটাকে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। এখানে ৪০০-৫০০ এর মতো লোক ঘর তৈরি করে থাকত। আমি কৌশলে তাদের তুলে দিয়েছি। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
রেলের পূর্বাচলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েকটি খণ্ড খণ্ড দাগে তাদের নামে কিছু জমিকৃষি কাজের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেই ইজারা বলে তারা মাটি ভরাট বা স্টাফদের বাসা দখল করতে পারে না। এমনকি বাণিজ্যিক কাজেও ব্যবহার করতে পারে না। রেলের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করার সুযোগও নেই।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাচলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (সিইও) সুজন চৌধুরী বলেন, রেলের জমি জবরদখলের কোনো সুযোগ নেই। দখলকারি যত প্রভাবশালীই হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি রেলওয়ের জায়গা লিজ নেয়। তাহলে ওই জায়গার মধ্যে কোনো বসতি থাকলে আইনগতভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদ করবে। ইজারাদারের কাউকে উচ্ছেদ করার সুযোগ নেই। যদি তিনি কৃষিকাজের জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করে থাকেন তাহলে সেই কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যদিও করার চেষ্টা করেন তাহলে শর্ত ভঙ্গ করার অপরাধে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে।
মন্তব্য করুন