বেশ কিছুদিন ধরেই অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। ভারত থেকে আমদানির খবরে কিছুটা কমলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। এরপরই বেড়েছে আলুর দাম। এবার তেলেসমাতি দেখাচ্ছেন জিরা ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কমার অজুহাতে দিনাজপুরের হিলিতে মাত্র দুদিনের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। দুদিন আগেও প্রতি কেজি জিরা ৯২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষজন।
সোমবার (১০ জুলাই) হিলির মসলার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি মসলার দোকানেই যথেষ্ট পরিমাণে জিরার উপস্থিতি দেখা করা গেছে। এরপরেও সরবরাহ কম বলে দাম বাড়তির কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে বাড়তি দামের কারণে অনেকে কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
হিলি বাজারে মসলা কিনতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী; সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে জিরার দাম বাড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে কাঁচামরিচ দাম বাড়তি, এখনো তো বাড়তির দিকে আছে। এত দাম দিয়ে তো আর কিছু কেনা সম্ভব নয়। দুদিন আগেও আমি দাম শুনে গেলাম ৯২০ টাকা কেজি জিরা, কিন্তু আজ নিতে এসে দাম শুনি ৯৫০ টাকা। দুদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা করে বেড়েছে। সব দোকানেই তো জিরা পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে তারপরও এত দাম কেন। এগুলো ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা যখন যেভাবে চাইছে মনগড়া দাম বাড়িয়ে চলছে। তাই আমরা চাই প্রশাসন কঠোরভাবে এগুলো মনিটরিং করুক যাতে করে পণ্যের কেউ দাম বাড়াতে না পারে।
হিলি বাজারের মসলা দোকানি আওলাদ হোসেন বলেন, ঈদের আগে জিরার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়তে থাকে। জিরার দামটা স্থিতিশীল থাকছেই না কখনো কমছে তো আবার বাড়ছে। ঈদের সময় জিরাসহ অন্যান্য মসলার একটা বাড়তি চাহিদা থাকে। জিরার বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমদানিকারকরা মসলার আমদানি বাড়িয়ে দেন। এতে করে বাজারে জিরার সরবরাহ বাড়ায় ঈদের সময় এর বেশি দাম বাড়েনি। পরে ঈদের পর ক্রেতাসংকটের কারণে জিরার চাহিদা কমে গেলে দাম উল্টো কমতে থাকে। সে সময়ে আমরা ৯০৫ টাকা থেকে ৯১০ টাকা কেজি ক্রয় করে ৯২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে আবারও জিরার দাম বাড়তি। এখন আমাদের ৯৪০ টাকা কেজি দরে কিনতেই হচ্ছে। এ কারণে আমরা ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ভারতের বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারে জিরার দাম বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত বন্দর দিয়ে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটি শেষে গত ৩ জুলাই থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। এদিন বন্দর দিয়ে দুই ট্রাকে ৫৫ টন জিরা আমদানি হয়েছিল। ৪ জুলাই বন্দর দিয়ে ৩ ট্রাকে ৮৫ টন জিরা আমদানি হয়েছিল। ৫ জুলাই চারটি ট্রাকে ১১০ টন জিরা আমদানি হয়। ৬ জুলাই বন্দর দিয়ে ৬টি ট্রাকে ১৬০ টন জিরা আমদানি হয় বন্দর দিয়ে। ৯ জুলাই বন্দর দিয়ে তিনটি ট্রাকে ৮৫ টন জিরা আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া গত জুন মাসে ৭৭টি ট্রাকে দুই হাজার ১৯০ টন জিরা আমদানি হয়েছে। কাস্টমসের পরীক্ষণ শুল্কায়ন শেষে দ্রুত এসব জিরা আমদানিকারকরা খালাস নিতে পারেন, সে জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, বাজারে অহেতুক যেন কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি না পায় সেটি রুখতে আমরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছি। এ সময় বিক্রেতাদের কেনাবেচার ম্যামো দেখে দামের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তারা কী দামে কিনছে, আর কী দামে বিক্রি করছে সেটি খতিয়ে দেখছি। যাদের গাফিলতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাদের আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন