১৫ বছর ধরে শেকলবন্দি অরুনা রানী। সহায় সম্বলহীন পরিবারে অসুস্থতা যেন এক অভিশাপের নাম। মেয়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে কোমরে শেকলবন্দি করে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। হৃদয়স্পর্শী এ দৃশ্যটি চোখে পানি আসবে যে কারও।
বরগুনা সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী আবাসনে গেলেই চোখে পড়বে নোংরা কাপড় চোপড় পরা ও কোমরে শেকল বাঁধা অবস্থায় বসে আছেন অরুনা রানী নামের এক মাঝ বয়সী নারীকে। একহাতে লোহার শিকল ধরে কখনো হাঁটাচলা করছেন, আবার কখনো বা মাটিতে বসে আপন মনে কথা বলছেন। আবার কেউ একটু কথা বলে ক্ষেপিয়ে তুললেই ঘরের খুঁটির সঙ্গে নিজেই ঠুকেন নিজের মাথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় বিশ বছর আগে জেলার চান্দখালী এলাকার অমলের সঙ্গে বিয়ে হয় তরুণী অরুনা রানীর। বিয়ের পরে স্বাভাবিকভাবেই চলছিল অমল-অরুনার দাম্পত্য জীবন। কিন্তু হঠাৎ করেই কালবৈশাখীর ঝড় আসে তাদের সংসারে। অরুনা রানীর অস্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ্য করে সে সময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে বাবার বাড়ি রেখে আসেন স্বামী অমল।
মানসিক প্রতিবন্ধী অরুনা রানী একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দিলেও স্বামীর বাড়িতে আর ফেরা হয়নি। ছেলেকে কাছে রাখলেও স্ত্রীর কোনো খোঁজ রাখেননি স্বামী অমল। অসহায় বাবা স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করালেও আস্তে আস্তে মানসিক সমস্যা বাড়তেই থাকে অরুনার।
বাবা যদুনাথ কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসারের ব্যয়ভার শেষে বাকিটুকু অরুনার চিকিৎসার জন্য খরচ করেন। অরুণার বড় দুই ভাই বাবা-মা কিংবা অরুনা কারোরই খোঁজখবর নেন না। বর্তমানে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে পোটকাখালী আবাসনের ৪ নম্বর ঘরে যেনতেনভাবে দিন পার করছেন অরুনা রানীর বৃদ্ধ বাবা-মা।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা আবেদন করলে অরুনার পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
অন্যদিকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ের বৃদ্ধ বাবা-মা।
মন্তব্য করুন