আকন্দ সোহাগ, মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০১:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সন্তানদের দুবেলা ভাত খাওয়াতে মুচির কাজ করছেন ববিতা রানী

ফুটপাতে বসে মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন ববিতা রানী দাস। ছবি : কালবেলা
ফুটপাতে বসে মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন ববিতা রানী দাস। ছবি : কালবেলা

অভাব-অনটনের কারণে বাবার ইচ্ছায় অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ববিতা রানী দাস। বিয়ের পর সংসারে আসে ফুটফুটে দুই সন্তান। স্বামীর নানান ধরনের অত্যাচারে ৮ বছর আগে সংসার ত্যাগ চলেন আসেন। পরে ঠাঁই হয় বাবার সংসারে।

জামালপুরের মাদারগঞ্জের কড়ইচূড়া ইউনিয়নের বড়ভাংবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ববিতার ভিটেমাটিসহ কোনো সহায়-সম্বল নেই। দুই সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চলছে তার জীবন সংগ্রাম।

দিনের পর দিন অনেক কষ্টে জীবন চললেও স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীর ভাগ্যে এখনো জোটেনি কোনো সহায়তা। ঠাঁই হয়নি সরকারি কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। নিজে ও সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাতের জন্য বেছে নিয়েছেন বাবার শেখানো মুচির পেশা। ফুটপাতে বসে মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।

এরই মধ্যে ৩৩ বছর বয়সী ববিতার শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ। টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। দুবেলা পেটে ভাত জোটানোই যেখানে দায়, সেখানে চিকিৎসা করাবেন কীভাবে! নিজের এলাকায় অনেক বিত্তবান ও রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলেও তার খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ নেই। কিছুদিন আগে অসুস্থতা বাড়লে হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন। কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেয়নি।

নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে ববিতা রানী বলেন, স্বামীর অত্যাচার ও খোঁজ না নেওয়ার ফলে সংসার ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। পরে বাবার মৃত্যুর বাড়িতে ঠাঁই হয়। কয়েক বছর আগে বাবা মারা গেলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এ পেশায় এসেছি। অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। ভাঙা ঘরে দুটি শিশু বাচ্চা নিয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এলাকার বিত্তবানরা একটু সহযোগিতা করলে অনেক উপকার হয়। বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, নারী হয়ে ফুটপাতে বসে অন্যের জুতা মেরামত করি বলে অনেকে আমার কাছে আসেন না। তাই আমি কম টাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজটি নিপুণভাবে করে দিই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না।

সংগ্রামী এই নারী জানান, অনেক সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটলেও তার ভাগ্যে আজও জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তা।

স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন শাহীন বলেন, সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও মুচির কাজে তাদের খুব একটা দেখা যায় না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ববিতা। তার কষ্টে আমাদের খারাপ লাগে।

মাদারগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওমর ফারুক পলাশ বলেন,দেশের এই পর্যায়ে এসেও ববিতা রানী অভাবের তাড়নায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন। এটি বেদনাদায়ক বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রসহ সমাজের বিত্তবানরা ববিতার পাশে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা করি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম খালেক বলেন,ববিতা রানীর বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানলাম। স্বামী পরিত্যক্তা ভাতাসহ ববিতা রানীর জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ওলামা-মাশায়েখদের ত্যাগ-কোরবানি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’

যুদ্ধবিরতিতে গাজার ঘরে ঘরে আনন্দ, রাস্তায় মিছিল

সচেতন হলে ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব : চসিক মেয়র

২০ মাসে মামলার রায়, স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারই জাতির একমাত্র লক্ষ্য : গয়েশ্বর

ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভেঙে ফেললেন লন্ডন প্রবাসী

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

১০

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

১১

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

১২

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

১৩

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৪

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

১৫

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১৬

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১৭

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১৮

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

১৯

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

২০
X