দেশে প্রথম হরিজন সম্প্রদায় থেকে আইনজীবী হয়েছেন চট্টগ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় গাউন পরিয়ে দেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ গাউন পরিয়ে আইনজীবী হিসেবে গ্রহণ করেন তাকে।
এর আগে গত ৯ মার্চ বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ।
চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে সংবর্ধনার আয়োজন করেন জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কার্যালয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁঞা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পিপি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণ চন্দ্র দাশের মা ছায়া দাশসহ হরিজন সম্প্রদায়ের আরও ছয়জন। প্রথম যুগ্ম জেলা জজ খায়রুল আমিন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁঞা বলেন, ‘দেশে প্রথম হরিজন সম্প্রদায়ের একজন সন্তান আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেন। তাকে সংবর্ধিত করার মাধ্যমে একটা বিষয় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া গেল, আমাদের দেশে সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার আছে। এটা আমাদের সবার জন্য সম্মানের ও গর্বের।‘
কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ কালবেলাকে বলেন, এইচএসসির পর কী করব সে সিদ্ধান্ত নিতে বাবা আমাকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে নিয়ে যান। তিনি বাবাকে বলেছিলেন, তোমাদের সম্প্রদায়ে অনেক সমস্যা। আইনজীবী দরকার, ছেলেকে আইনজীবী বানাও। তারপর ওনি আমাকে বিনা বেতনে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। সেখানে কোনো সেমিস্টার ফি দেওয়া ছাড়াই পড়াশোনা করেছি । শুধু পরীক্ষার ফি দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সেটা বাস্তব হবে এবং এভাবে আমাকে জেলা জজ মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আজকের দিনটা আমার জন্য গর্বের। শুধু আমার জন্য না, আমার সম্প্রদায়ের সব মানুষের জন্যই গর্বের। এই স্বপ্ন যেহেতু বাস্তব হলো, এখন স্বপ্ন দেখছি হাইকোর্টের আইনজীবী হওয়ার।’
পিপি ইফতেখার সাইমুলের ভূমিকার কথা স্মরণ করে কৃষ্ণ বলেন, ‘২০১৭ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যান। আমার আইন পড়া শেষ হয় ২০১৮ সালে। সাইমুল স্যার সবসময় খোঁজখবর রেখেছেন। পাস করার পর উনার চেম্বারে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। কোনোদিন বুঝতে দেননি আমি হরিজনদের কেউ। উনার সঙ্গে এক টেবিলে বসেও খাইয়েছেন। কারও কাছে আমার পরিচয় জানাতে দেননি।’
চট্টগ্রাম জেলা পিপি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রজীবনে ৯০ দশকে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। একটা সময় ছিল তাদের কাছে লোকজন চা পর্যন্ত বিক্রি করত না। এই ধারাটা পরিবর্তনের জন্য কাজ করার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।’
কৃষ্ণ চন্দ্রের মা ছায়া চন্দ্র বলেন, ‘ছেলেটা অনেক কষ্ট করেছে। এখন সফল হয়েছে। আজ জজ সাহেব কালো জামা পরিয়ে দিল, ফুল দিল। ভালো লাগছে। এমন দিন দেখার পর জীবনে আর কোনো দুঃখ থাকবে না।’
চট্টগ্রামের বান্ডেল কলোনির সেবক গলির বাসিন্দা কৃষ্ণ চন্দ্র দাশের বাবার প্রয়াত চিরঞ্জীব দাশ ও মা ছায়া দাশ। দুজনই সিটি করপোরেশনের সেবক ছিলেন। চসিক মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ইসলামিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১৪ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে ভর্তি হন বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মন্তব্য করুন