মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা বাগানগুলোতে নতুন চা পাতা কুঁড়ি তোলা শুরু হয়েছে। চা গাছে নতুন কুঁড়ি সবুজের শোভা বর্ধন করেছে। সতেজতায় হাসছে চা বাগান।
সরেজমিনে দেখা যায়, চা বাগানে নতুন চা পাতার কুঁড়ি তুলতে আনন্দে আত্মহারা চা শ্রমিকরা। শ্রীমঙ্গলে কয়েকটি চা বাগানগুলোতে সেকশনে বাগান কর্তৃপক্ষ, চা শ্রমিক ও পঞ্চায়েত নেতাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা পুজোর্চনা, গীতাপাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এরপর নাচে-গানে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন শ্রমিকরা।
চা গাছে পুনিং শেষে আবার নতুন কুড়ি এসেছে চা গাছে। এতে চা বাগান ফিরছে সবুজের সমারোহে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় ছাঁটাই (প্রুনিং) করা চা গাছে নতুন কুঁড়ি ফুটছে। প্রতিটি বাগানে লেগেছে নতুন প্রাণের ছোঁয়া। চারদিকে সতেজ ও কোমল সবুজের সমারোহ।
সূত্র জানায়, ১ মার্চ থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে টিপিং (চা পাতা চয়ন) শুরু হয়েছে। এ সময় শুরু হয় চা-পাতা চয়ন। যাকে বলা হয় টিপিং। মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথম থেকে পুরোদমে শুরু হয় চা পাতা চয়নের কাজ। বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরাও চা পাতা উত্তোলনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সাধারণত ডিসেম্বরে মৌসুমের শেষে চা গাছ ছাঁটাই বা কলমের পর নিয়মানুযায়ী দুতিন মাস চা বাগানে চা পাতা উৎপাদন বন্ধ থাকে। ফলে চা কারখানাও অলস থাকতে হয়। সেচ সুবিধা ও বৃষ্টিপাতের কারণে নতুন কুঁড়ি গজানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে চা পাতা চয়নের মাধ্যমে শুরু হয় চায়ের উৎপাদন। এ বছরও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পাঞ্চলে চলতি মৌসুমের (২০২৪) চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রীমঙ্গলের বেশ কয়েকটি চা বাগানে টিপিং (পাতা চয়ন) শুরু হওয়াার পর উৎপাদন শুরু হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চা শিল্পাঞ্চলে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও বাগানের চা শ্রমিক আশালতা কুর্মি বলেন, ‘সকালে পূজা ও প্রার্থনার মাধ্যমে চা পাতা চয়ন শুরু হয়। চা চয়নের পূর্বে নারী চা শ্রমিকরা একটি চা গাছকে উপলক্ষ করে ফুল ও প্রসাদ দিয়ে পূজা করেন। এটাকে তারা বন দেবীর পূজা বলেন। এ পূজা করা হয় চা বাগানের সেকশনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে। নেচে গেয়ে আনন্দঘন পরিবেশে তারা চা চয়নে লেগে পড়েন।’
শ্রীমঙ্গলের নাহার চা-বাগানের সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থপক মো. জাকির হোসেন জানান এবার মৌসুমের শুরুতেই আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং চা গাছে নতুন কুঁড়ি চলে আসায় বেশ কিছু বাগানে ট্রিপিং শুরু হয়ে গেছে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চা মৌসুম শেষ হয়ে যায়। তখন চা গাছে প্রুনিং করা হয়। এসময় দুই থেকে তিন মাস চা ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে। মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টি হলে আবার চা শিল্পে আসে প্রাণচাঞ্চল্য।
মন্তব্য করুন