মো.আবু জুবায়ের উজ্জল, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদে বিক্রিবাট্টায় আশা দেখছেন টাঙ্গাইলের শাড়ি ব্যবসায়ীরা

তাঁত শ্রমিকরা শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবি : কালবেলা
তাঁত শ্রমিকরা শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবি : কালবেলা

আসন্ন ঈদে টাঙ্গাইলের শাড়ি বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে চায় তাঁত শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। অন্যদিকে যে মজুরি পায় তাতে সংসার চালানোয় হিমমিম খাচ্ছে তাঁত শ্রমিকরা। সবকিছুর দাম বাড়ায় পরিবার নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। তারপরও আশা করছেন ঈদের বেচাকেনা নিয়ে।

এ ঈদ উৎসবে এবার প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা করছে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স। দেশের পাশাপাশি অন্য দেশেও রপ্তানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। গত বছর ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল টাঙ্গাইলের ৭৪ লাখ পিস শাড়ি। এবার রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাঁতের রাজধানী টাঙ্গাইলের পাথরাইল ছাড়াও বাজিতপুর, এলাসিন, করটিয়া, বল্লা, এনায়েতপুর, পোড়াবাড়ি, চারাবাড়ি, বাঘিলসহ সব তাঁতপল্লীগুলোতে তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত। এ শিল্পে শুধু পুরুষরাই নয়, বাড়ির মহিলারাও যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছেন। কেউ সুতা ছিটানোয় ওঠানোর কাজে, কেউ সুতা পাড়ি করার কাজে, আবার কেউ সুতা নাটাইয়ে ওঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঈদের পরই বৈশাখের আগমন মুহূর্তে তাঁতপল্লীগুলোতে কাপড় তৈরির প্রচণ্ড ব্যস্ততায় মহিলারাও সমসাময়িকভাবে পুরুষের কাজ সম্পন্ন করতে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাথরাইল তাঁতপল্লীতে কথা হয় রাবিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা থেকে শাড়ি কিনতে এসেছেন টাঙ্গাইলে। তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কোয়ালিটি ভালো। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। তারপরও টাঙ্গাইলের শাড়ি অনেক ভালো মানের। সেজন্য নিয়ে যাচ্ছি।’

আরেক ক্রেতা সুমাইয়া শিমু বলেন, ‘ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুটি তাঁতের শাড়ি নিয়ে গেলাম। পরিবারের জন্যও ৩টি নিয়েছি। শাড়ির মান ও ডিজাইন অনেক ভালো। এজন্য প্রতি বছর টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কিনতে আসি। আগের থেকে এবার দাম বেশি রাখছে। দাম একটু কম হলে ভালো হতো।’

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল গ্রামের তাঁত শ্রমিক মুসলিম মিয়া বলেন, একটা শাড়ি তৈরিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আমরা বর্তমানে পৌনে সাতশ টাকা মজুরি পাচ্ছি। এ দিয়ে আর সংসার চলে না। এ পেশা যে ছেড়ে দেব, তাও তো সম্ভব না। অন্য কোনো কাজ পারি না। পেটের তাগিদে এ পেশা ধরে রেখেছি। মহাজন ঠিকমতো কাপড় বিক্রি করতে পারলে আমাদের কাজ দেয়। আর বিক্রি করতে না পারলে কাজ দেয় না।

একই এলাকার আরফান আলী বলেন, আমি এ পেশায় কাজ করি ৩৫ বছর ধরে। আমাদের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয়। একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে তিন-চার দিন। বিক্রি হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। মজুরি দেয় মাত্র ১ হাজার টাকা। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। বেশিরভাগই এ পেশা থেকে চলে গেছেন। আমি অন্য কোনো কাজ আর শিখিনি। এজন্য আমি যেতে পারিনি। আমাদের মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।

পাথরাইল এলাকার তাঁতশিল্পের মালিক গোবিন্দ সূত্রধর বলেন, বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। পাওয়ার লুমের কারণে হ্যান্ডলুমের তৈরি শাড়ি কম চলে। এদিকে হ্যান্ডলুমের শাড়ির দামও বেশি। পাওয়ার লুমের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে পাঁচশ থেকে সাতশ টাকায়। এদিকে হ্যান্ডলুমের শাড়ি তৈরি করতেই মজুরি দিতে হয় পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা। এজন্য আমাদের শাড়ি কম চলে। তারপরও আশা করছি এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি হওয়ায় এবার আমাদের বিক্রি ভালো হবে। গতবারের থেকে এবার বেশি বিক্রি হবে।

টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে এবার নতুনত্ব এসেছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এবার প্রায় তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এবার মোটামুটি সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমরা যা উৎপাদন করেছি, বাজারে তা ছেড়ে দিয়েছি। পাইকারি বিক্রিও মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। আমরা আশাবাদী, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর আমাদের রপ্তানিও বেশি হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ভারতে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি রপ্তানি হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৭৪ লাখ পিস। এ রপ্তানি আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারণ শুধু আমাদের দেশের বাজার দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডেও লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁতিদের আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে থাকি। প্রণোদনামূলক ঋণ হিসেবে ৫ শতাংশ ঋণ সার্ভিস চার্জে আমরা তাঁতিদের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জান্তার হেলিকপ্টার ভূপাতিতের দাবি মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের

বাজারে যাওয়ার পথে সাপের কামড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

আন্দোলন নিয়ে নতুন বার্তা কর্নেল অলির

‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ বাস্তবায়নে মাঠে ফেনী পুলিশ

পরিবেশ রক্ষায় জবি শিক্ষার্থীর একক পদযাত্রা

জীবন দিয়ে দেশ বিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলা করব : নাছিম 

মহানন্দা নদীতে ডুবে দুজনের মৃত্যু

গোষ্ঠীতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের রুখে দাঁড়াতে হবে: মেনন

বিএনপি অধ্যুষিত জয়পুরহাটে সর্বোচ্চ ভোট, সমীকরণ মিলছে না

গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবি পার্টির বিক্ষোভ 

১০

নতুন ভবনে নতুন আঙ্গিকে গণহত্যা জাদুঘর

১১

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা প্রত্যাহার, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস

১২

ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হবে অক্টোবরে : রেলমন্ত্রী

১৩

পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে সাবেক ইউপি সদস্যকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

১৪

গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

১৫

ফরিদপুরের ডিসি / ‘বুলেট থাকতে ব্যালটে কেউ হাত দিতে পারবে না’

১৬

হেরে যাচ্ছে ইসরায়েল, বিস্ফোরক মন্তব্য মোসাদের সাবেক উপপ্রধানের

১৭

যে কারণে ডিবিতে এসেছিলেন মামুনুল হক

১৮

অর্থনীতিকে ধারণ করার সক্ষমতা হারাচ্ছে ব্যাংকিং খাত : ফাহমিদা খাতুন

১৯

নাটোরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

২০
X