প্রথমে পুকুর, নদী বা খালবিলের পরিষ্কার এঁটেল মাটি আনা হয়। তারপর মাটি পরিষ্কার করে তা থেকে কণা সরানো হয়। পরে চাকে মাটি দেওয়া হয়। কাঠের তৈরি মাস্তুল ঘুরিয়ে নান্দনিক ডিজাইন করে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে পোড়ানো হয় আগুনে। এভাবেই তৈরি হয় মাটির বিভিন্ন আকৃতির তৈজসপত্র।
মৃৎশিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে তৈরি করেন মাটির জিনিসপত্র। এক সময় মাটির হাঁড়ি, কলস, থালা, পিঠার ছাঁচ, ধুনচিসহ নানা সামগ্রীর কদর ছিল। সাংসারিক কাজে এসব ব্যবহার হতো। মাটির পাত্রে ভাত রান্না থেকে শুরু করে পানি পান ছিল নিত্যদিনের দৃশ্য।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাচ, সিরামিক, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্ম্যে কমেছে মৃৎপণ্যের কদর। তবুও পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা। তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় এখনো মাটি থেকে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক সামগ্রী।
বৈশাখী মেলা ও উৎসবকে সামনে রেখে মৃৎ শিল্পীরা মাটির সামগ্রী তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৈশাখী মেলায় মাটির জিনিসপত্রের কদর থাকে। কুমার পরিবারের নারী ও পুরুষ সদস্যরা মিলে মাটির এসব জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লালমনিরহাটে কালীগঞ্জ উপজেলা কাকিনা ইউনিয়নে কুমার পাড়া পাল বাড়িতে বৈশাখীর মেলা ঘিরে তৈরি করছেন হাতি, ঘোড়া, গরু, খরগোস, পাখি, ব্যাংক, পুতুল, ও হাড়ি-পাতিল। হাতে তৈরি এসব কাঁচা মাটির জিনিসপত্র রোদে শুকানো হচ্ছে। পরে আগুনে পুড়িয়ে রং করা হচ্ছে। বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নির্ঘুম ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা।
বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর প্রযুক্তির উন্নয়নের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে কুমারদের জীবন। পূর্বপুরুষের পেশার মর্যাদা ও বাঙালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো সংগ্রাম করছেন তারা।
মন্তব্য করুন