সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তীব্র খরায় নুয়ে পড়ছে ক্ষেতের পাট, দিশেহারা কৃষক!

৬০ বছর বয়সী পাটচাষি আবেদ মোল্লা একাই ছাতা নিয়ে পাটের জমিতে পরিচর্যা করছেন। ছবি : কালবেলা
৬০ বছর বয়সী পাটচাষি আবেদ মোল্লা একাই ছাতা নিয়ে পাটের জমিতে পরিচর্যা করছেন। ছবি : কালবেলা

মাস দেড়েক আগে সোনালি আঁশ পাট বীজ বপন করেন কৃষকেরা। এরপর থেকে আর বৃষ্টির দেখা মিলছে না। কৃষকরা পানির জন্য হাহাকার করছেন। এমন অবস্থায় তীব্র খরার দাবদাহে নুয়ে পড়ছে তাদের ক্ষেতের পাট। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়েও ঠিকমতো সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত খরায় ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে।

পাট উৎপাদনে সেরা ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চিত্র এটি। দুর্ভাবনা তাই জেঁকে বসেছে এখানকার কৃষকদের মনে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ফরিদপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়ে থাকে। যে কারণে ফরিদপুরকে পাটের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। এবারও সদরপুর ও চরভদ্রাসনে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।

দেশের এ অন্যতম প্রধান অর্থকরি ফসলেই ফরিদপুর জেলার ব্রান্ডিং। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেই ভালোবাসার ফসল নষ্ট হলে শুধু কৃষকেরই নয়, কৃষি খাতেরও ক্ষতি বয়ে আনবে। যা দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ওপরেও নেচিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই চলমান দাবদাহের দুশ্চিন্তায় এখন কৃষকের থেকে বিস্তার পাচ্ছে আরও অনেকের মনে। সরেজমিনে মাঠপর্যায়ে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে স্থানীয় কৃষিবিভাগ বলছে, এই খরায় পাটের ওপর প্রভাব পড়বে না।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে সদরপুরের কাটাখালি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে আবেদ মোল্লা নামে ৬০ বছর বয়সী এক পাটচাষি তার জমিতে একা একা ছাতা নিয়ে ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন। এ সময় তিনি কালবেলাকে বলেন, অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কেউ ক্ষেতে কাজ করতে পারতেছে না, শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে একা একা পাটক্ষেত পরিচর্যা করছি। দেড় মাস আগে আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট বীজ বপন করেছি।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি না নামায় অতিরিক্ত রোদের তাপে আমার সব জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে পাটের চারাও বেড়ে উঠছে না। এক থেকে দেড় মাসে প্রতিটি পাটের গাছ দুই হাত করে লম্বা হওয়া কথা। কিন্তু পানির অভাবে এখন পর্যন্ত ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে লম্বা হয়েছে পাটের গাছ। এমন অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন ঘনঘন সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না। সকালে সেচ দিলে বিকেলে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার ভালো ফলন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

চরভদ্রাসনের চর হরিরামপুর ইউনিয়নের পাটচাষি মোস্তফা প্রামাণিক কালবেলাকে বলেন, এবার পাটচাষ করে চরম সমস্যায় আছি। তীব্র দাবদাহে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। পাটক্ষেতে বাড়ি সেচ দিতে গিয়ে ডিজেল কিনে কৃষকদের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ যদি মাত্র একবার বৃষ্টি দিতেন, তাহলে আমাদের বুক সমান পাটের চারা বেড়ে উঠত। সেই সঙ্গে মাঠের পর মাঠ পাটের পাতা সবুজে ছেয়ে যেত।

শাহ আলম মোল্লা নামে আরেক পাটচাষি বলেন, বৃষ্টির কোনো দেখা নেই এক থেকে দেড় মাস যাবত। শ্যালো মেশিন দিয়েও ঠিকভাবে পানি ওঠে না, পাতাল থেকে পানি উঠাতে অনেক চেষ্টা করে। আবার অনেক সময় পানি উঠাতে ব্যর্থ হই। যদি কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হয় এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাহলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।

তবে সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় কালবেলাকে বলেন, সদরপুরে এবার প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত পাটের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তীব্র খরায় পাট গাছগুলো কিছুটা ধীরগতিতে বেড়ে উঠছে। তবে আরও এক সপ্তাহ পরেও যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে মাত্র ৭-৮ দিনেই পাটগাছ মানুষ সমান বেড়ে উঠবে।

চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন কালবেলাকে বলেন, চরভদ্রাসনে এবার প্রায় ৯২০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। চলমান খরায় কৃষকদের জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাট জাগের উপযোগী পরিবেশে গুণগত মানসম্পন্ন সোনালি আঁশ উৎপাদন হবে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, পাট খরা সহনশীল ফসল। তবে পাটের ভালো ফলন নির্ভর করে বৃষ্টির ওপরেই। চলমান খরার মধ্যে যেসব পাটের গাছ বড় হয়ে গেছে, সেগুলোর কোনো সমস্যা হবে না। খরায় ছোট পাটগাছের সামান্য সমস্যা হলেও বৃষ্টির পানি পেলে ঠিক হয়ে যাবে। যদিও পাটগাছ ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় কৃষকরা চিন্তিত। তবে কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।

তিনি আরও বলেন, জেলাব্যাপী মাঠে কাজ করছে আমাদের টিম। ভালো মানের পাট উৎপাদনের লক্ষ্যে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘প্রেমিক হয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু হয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা’

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়াসহ ৪ দেশ

ওএসডি হচ্ছেন শরীয়তপুরের বিতর্কিত ডিসি আশরাফ

শান্তির ডাকে যুদ্ধ আরও জটিল রূপ নিচ্ছে না তো?

ট্রাম্পের হম্বিতম্বির নেপথ্যে কী

নতুন দায়িত্ব নেওয়া ইরানি ড্রোন কমান্ডারকেও মেরে ফেলল ইসরায়েল

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মতুয়া সম্প্রদায়ের পাশে পূজা উদযাপন পরিষদ

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১

থানায় রক্ষিত বাক্স ভেঙে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত / ৫৭ দেশের সহস্রাধিক মুসলিম নেতা বৈঠকে বসছেন আজ

১০

নতুনবাজার অবরোধ করলেন ইউআইইউর শিক্ষার্থীরা

১১

ছাত্রাবাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১২

ইরানের ভূকম্পন কি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা?

১৩

দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক? কিডনি সমস্যার লক্ষণ নয়তো

১৪

ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পরস্পরবিরোধী বার্তা

১৫

‘চা-নাশতার’ খরচে মিলছে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি

১৬

তুরস্কে গেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৭

‘পুরো বিশ্বের সামনে ইসরায়েলকে নত করাবে ইরানের বাহিনী’

১৮

ইরান বলছে কূটনীতির দরজা খোলা, ইসরায়েল জানাল হামলা চলবে

১৯

ঢাকায় বৃষ্টি হলে বাড়বে তাপমাত্রা

২০
X