নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

নিয়ামতপুরে ঢেঁকিতে ধান ভানছেন কয়েকজন গৃহবধূ। ছবি : কালবেলা
নিয়ামতপুরে ঢেঁকিতে ধান ভানছেন কয়েকজন গৃহবধূ। ছবি : কালবেলা

‘ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউ নাচে, হেলিয়া দুলিয়া'। ঢেঁকি পাড়ে প্রতিদিন ভোরে গ্রামের বধূদের এমন গানে মুখরিত হতো বাংলার গ্রামীণ জনপদ। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি।

বাংলার গ্রামীণ রমণীরা ধান ভানা, হলুদ, মরচি, মটরশুঁটি, ডাল গুঁড়ো ও পৌষ-পার্বণে পিঠা তৈরির জন্য চালের গুঁড়ো করতে ঢেঁকি ব্যবহার করতেন। এখন আর গ্রাম-বাংলায় ঢেঁকি দেখা যায় না বললেই চলে।

অতীতে গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ধান থেকে চাল তৈরির জন্য কিংবা চালের আটা তৈরির জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিল ভরসা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মিলত ঢেঁকির। প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ঢেঁকি ব্যবহার হয়ে আসছে। তখন বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকিই ছিল একমাত্র মাধ্যম। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ঢেঁকি গৃহস্থের সচ্ছলতা ও সুখ সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগেকার দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার।

এক সময় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম-অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারেই ধান-চাল গুঁড়ো করার জন্য ঢেঁকির প্রচলন ছিল। ধান থেকে চাল আর চাল থেকে আটা। এ দুটোই প্রস্তুতের একটি মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকি পাড়ে ধুম পড়তো নতুন ধানে আটা তৈরির।

এ এলাকার নারীরা ধান, গম, চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। বিশেষ করে নবান্ন উৎসব পৌষ পার্বণ, শীতকালসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকির নতুন ধানের চালের গুঁড়া তৈরিতে ধুম পড়ে যেত। সে সময় গ্রামের বধূদের ধান ভাঙার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারদিকে চলতো হৈ চৈ আর আনন্দ। অনেক পরিবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই আদিকালের ধান ভাঙানের এ কাঠের উপকরণটি। ধানভাঙা মেশিনের করাল গ্রাসে তা আজ আমাদের সংস্কৃতি থেকে মুছে যাচ্ছে। এক সময় ঢেঁকি নিয়ে কবি সাহিত্যিকরা কত না কবিতাই রচনা করেছেন আর বাউলরা গেয়েছেন গান। আজ আর সেই দিন নেই। পঞ্চাশের দশকে এ দেশে শুরু হয় চালকলের প্রচলন। তারপর দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছরে তা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে গেছে। এখন কৃষকরাও ধান ভাঙার জন্য মেশিনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহানুর বেগম বলেন, আমি যখন প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলাম। তখন থেকে শাশুড়ির সঙ্গে ভোর বেলায় ঢেঁকিতে পাড় দিতে যেতাম। ঢেঁকির চালের ভাত লালচে বর্ণের হতো তবে খুব সুস্বাদু। এখন আর ঢেঁকিতে পাড় দিতে হয় না। মেশিনে চাল ও আটা ভাঙানো হয়। চাল সংগ্রহের জন্য আগের দিনে গ্রামের গৃহবধূদের অনেক কষ্ট করতে হতো। এখন আর তেমন কোন কষ্ট করতে হয় না।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাকসুদুল হক বলেন, একসময় এ অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ঢেঁকিতে ভাঙা চালের ভাত অনেক সুস্বাধু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। সভ্যতায় যাত্রাপথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষেই তা বিলুপ্ত হতে চলেছে। ঢেঁকির ঐতিহ্য ও সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার পাওয়ার জন্য ঢেঁকির ব্যবহার অনস্বীকার্য।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়েতে দাওয়াত না দেওয়ায় সংঘর্ষ

৮০০ বছর ধরে শক্তি জমছে নরসিংদী অঞ্চলে, বড় ভূমিকম্প হবেই

বাংলাদেশিদের আপ্যায়নে আবেগাপ্লুত সাদিও মানে

পুলিশের হাতে কামড় দিয়ে পালালেন রবিন

প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৩য় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

নির্বাচন না হলে দেশে সংকট দেখা দেবে : জামায়াত আমির

দল থেকে সুখবর পেলেন বিএনপির ১০ নেতা

অ্যালকালাইন ওয়াটার আসলে কতটা উপকারী

শক্তিশালী পিঠ বানানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম : সামান্থা

নানা আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

১০০ দিনে ক্যাপিটালসে মোস্তাফিজকে ঘিরে অদ্ভুত নাটক

১১

এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও নরসিংদী

১২

‘সংসদ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে’

১৩

গৌহাটিতে প্রথম দিন শেষে চাপে প্রোটিয়ারা

১৪

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা, কবে কোথায় আঘাত হানবে

১৫

আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করার সন্নিকটে বাংলাদেশ

১৬

জাহেলি যুগ আর ফিরে আসবে না : ধর্ম উপদেষ্টা

১৭

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো গ্রেপ্তার

১৮

সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর : প্রধান বিচারপতি

১৯

জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে সিদ্ধান্তের টানাপোড়েনে শেষ হলো কপ সম্মেলন

২০
X