জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে পুকুরে ডুবে মো. মুছা (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মে ) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার মনঝার বাজারের বড়পুকুর নামে পুকুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু মনঝার বাজার এলাকার তারেক হোসেনের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়িতে সবাই ধানের কাজ করেছিলেন। শিশু মুছা বাইরে খেলা করছিল। এ সময় অসাবধানতায় সে পুকুরে পড়ে ডুবে যায়। পরে স্থানীয়রা শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ক্ষেতলাল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইমায়েদুল জাহেদী।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারা যায়। আর এদের অর্ধেকেরও বেশির মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৪৬ জন। পুকুরে বা দিঘিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঘটে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে।
এ সময় এক থেকে দুই বছরের শিশুই বেশি মারা যায়। কারণ এসব সন্তানের মা যখন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন তখনই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।
ইউনিসেফের এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক থেকে ১৭ বছরের শিশুদের মধ্যে অন্য যে কোনো রোগে ভোগে মৃত্যুর চেয়ে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ শতাংশ।
এ ছাড়া সেপটিসিমিয়াতে এক শতাংশ, আত্মহত্যা করে ৪ শতাংশ, সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ শতাংশ, মানিনজাইটিসে ৭ শতাংশ, ডায়রিয়ায় ১৩ শতাংশ, অপুষ্টির কারণে ১৩ শতাংশ ও নিউমোনিয়ায় ২০ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটে। নদী, পুকুর, জলাশয়, নালা বা খালে পাড়ে অধিকাংশ শিশুরই মৃত্যু হয়। শিশুদের মধ্যে যারা কেবলমাত্র নতুন হাঁটতে শিখেছে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
সাধারণত : শিশু ৯ মাস বয়সে পৌঁছালে ঝুঁকি বেড়ে যায়। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত তত্ত্বাবধানের অভাবই এর মূল কারণ।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু এত দ্রুত ঘটে যে শিশুটিকে কোনো রকম সাহায্য করার সময় ও সুযোগ থাকে না। একমাত্র অসতর্কতার কারণেই এভাবে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু ঘটছে। আর এই শিশুমৃত্যু জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ মৃত্যুসংখ্যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভের (বিএইচআইএস) গবেষণায় বলা হয়েছে, এক থেকে চার বছরের শিশুরাই এর সবচেয়ে বড় শিকার। কারণ তারা অবুঝ। তাদের বোঝার বয়স হয়নি। তাদের বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা নেই। উপরন্তু তারা সাঁতার কাটতেও জানে না। কোনো পুকুর বা কোনো জলাশয়ে পড়ে গেলে তাদের সামলে নেওয়ার শারীরিক শক্তিও থাকে না।
তথ্য অনুযায়ী, শহরের চেয়ে গ্রামে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বেশি। অধিকাংশ শিশুই বাড়ি থেকে ২০ মিটার এবং কম বয়সীরা ১০ মিটার দূরত্বের কোনো পুকুর বা জলাশয়ের মধ্যে পড়ে মারা যায়। অথচ এসব শিশুমৃত্যুর শতভাগই প্রতিরোধযোগ্য।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে (বিএইচআইএস) পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছে, তা হলো- বিপদজনক এলাকা কোনটি, কোন কোন শিশু সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং কেন একটি শিশু অন্য শিশুদের চাইতে পানিতে ডুবে মরার আশঙ্কায় থাকবে?
এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের নকশা প্রণয়ন করে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে অগণিত শিশুর জীবন বাঁচবে।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী শিশুদের পানিতে ডুবে বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে শুধু সাঁতার না জানার কারণেই। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য ইউনিসেফের একটি সংগঠন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ বা ‘সিইপিআরবি’ বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে।
সংগঠনটি ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশি শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। বাচ্চাদের সুইমিং পুলে সাঁতার শেখানো সম্ভব নয় বলে স্থানীয় জলাশয় বা পুকুরকেই তারা প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছে।
বাংলাদেশের সব শিশুকে সাঁতার শেখানোই তাদের লক্ষ্য। এ পর্যন্ত সংগঠনটি ৩০ হাজার শিশুকে সাঁতারকাটা শিখিয়েছে।
মন্তব্য করুন