নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলা শুরু হয়েছে। জেলার বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামে মঙ্গলবার (১৪ মে) থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
একটি গাছ বা খুঁটিকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা উদযাপন হয় বলে জানান স্থানীয়রা। প্রতি বছর ৩১ বৈশাখ থেকে শুরু করে ২ জৈষ্ঠ পর্যন্ত এ মেলার আয়োজন করা হয়। যা পাগলা গাছের মেলা হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। মূলত ৩১ বৈশাখ দুপুর থেকে হামছাদী গ্রামের বটতলায় মেলার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
এলাকাবাসী জানান, ৫০০ বছর আগে হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামের দু’ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। বাংলা মাসের ১ জ্যৈষ্ঠ রাতে তারা দুভাই স্বপ্নে দেখেন তাদের কেনা খুঁটি থেকে ২টি খুঁটি নিজেদেরকে দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। খুঁটি দুটি পাগল রূপ ধারণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছে আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা করো। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে।
এ ঘটনার পর পরের দিন দু’ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পারে খুঁটি দুটি দেখতে পায়। তারপর থেকে তারা দুই ভাই খুটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা অর্চনা করতে থাকে। সে থেকে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গাছের খুঁটি দুটিকে প্রতিবছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে বিশেষ পূজা অর্চনা করে আসছে। পরে দুটি খুঁটি থেকে একটি হারিয়ে যায়।
এলাকাবাসী আরও জানান, খুঁটিটি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে সারা বছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা ভক্তি করার জন্য প্রতিবছর পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করায়। তাছাড়া ফল ফলাদি ঘি, খাসি ও পাঠাবলি দিয়ে পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করে। পূজা শেষে খুঁটিটি আবার ওই পুকুরে পানিয়ে ডুবিয়ে রাখা হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন পান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার লোকজনের সমাগম ঘটে।
সরজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দোকানিরা তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। তাছাড়া অনেকেই মেলায় নাগর দোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি পাাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পুণ্যার্থীরা মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য ওই এলাকায় তাদের স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।
হামছাদী গ্রামের আবুল মিয়া জানান, এ মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের মিলনমেলায় এক প্রকার উৎসবে পরিণত হয়। প্রতিবছর এ মেলার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করে থাকে।
পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য তপন কুমার চক্রবর্তী জানান, এ মেলা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
তিনি জানান, মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ মেলায় গীতা পাঠ, কীর্তনসহ সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সংগীত পরিবেশিত হবে।
মন্তব্য করুন