পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি শনিবার (২৫ মে) রাতে আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হতে পারে।
এর প্রভাবে ৫ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার (২৬ মে) বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি এটি উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র। সরকারি বা স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম। মজুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার। বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ টাকা। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
শনিবারের বিকেল ৫টায় জেলা প্রশাসনের জাফর আলম সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, ৭ নম্বর বুলেটিন অনুযায়ী গভীর নিম্নচাপটি শনিবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। সর্বশেষ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার মধ্য রাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হবে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে রবিবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাতে সেটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এটি কক্সবাজারে তেমন আঘাত হানার সম্ভবনা না থাকলেও এ সময় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও সাগরে পানির উচ্চতাও বাড়াতে পারে। ঘটতে পারে পাহাড়ধস।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ৬৩৮টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এ ছাড়া দুর্যোগের সময়ে কাজ করবে ৮ হাজার ৬০০ জন সিপিপি এবং ২ হাজার ২০০ জন রেডক্রিসেন্ট সদস্য।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টীম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। সন্ধ্যায় মিটিং শেষ করেই সিপিপি ও অন্য স্বেচ্ছাসেবক টিমগুলো সচেতনতা বাড়াতে উপকূলে মাইকিং নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।
জেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, সোমবার (২০ মে) থেকে সরকারিভাবে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে কারণে আগে থেকেই মাছ ধরার ট্রলারগুলো তীরে নোঙর করা রয়েছে। ছোটখাটো যেসব ট্রলার তীরের আশপাশে মাছ ধরে তাদেরও সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তেমন কোনো প্রভাব না থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে ৫ লাখ মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা সহজ হয়। দুর্যোগকালীন সময় সাধারণ মানুষের জন্য খাবারের পাশাপাশি সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও কক্সবাজারজুড়ে এর কোনো প্রভাব নেই। তবে, সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুপুরে পানি একটু বেড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
মন্তব্য করুন