পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার ১০ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভার কৃষকরা। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় আশানুরূপ দাম না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে পেকে আছে সোনালি ধান। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় কৃষি শ্রমিকের সংকটের মাঝেও পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। নদীর চরের জমিতে বৈশাখের শুরু থেকেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়। ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় ৬০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ, চলছে মাড়াই ও শুকানোর কাজ।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ খরচ বেড়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে ধানের রোগবালাই কম থাকায় বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধান উৎপাদন হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগেও বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। বাজারভেদে প্রতি মণ বোরো ধান ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ধানের দাম কিছুটা কমে গিয়ে বাজারভেদে প্রতি মণ বোরো ধান ৯৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সার, বীজ ও সেচের খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশানুরূপ লাভ করতে পারছেন না কৃষকরা।
টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের গাজকাটি এলাকার জামরুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, এক বিঘা জমিতে ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে সার, সেচ, শ্রমিক, ধান কাটা, মাড়াই ও পরিবহনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘায় ২৫ মণের মতো ধান হয়েছে। বাজারের যে দাম তাতে খরচ বাদে খুব একটা লাভ হবে না।
শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝারি এলাকার রবিউল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ধান লাগানোর পর মাঝখানে তীব্র খরা দেখা দিয়েছিল। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে সমস্যা হয়েছে।
সে সময় ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তারপরও আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। এখন ধানের দামের জন্য বাজারের দিকে তাকিয়ে আছি।
দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পূর্ব দেবীডুবা প্রধান পাড়া এলাকার বর্গা চাষি ময়নুল ইসলাম বলেন, তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান লাগিয়েছিলাম। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় গতবারের তুলনায় তেল খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া গত বছর এক বিঘা জমিতে ধান কাটার খরচ ছিল ২ হাজর থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এবার শ্রমিকের দাম অনেক বেশি, ৩ হাজার ৫০০ টাকার নিচে ধান কাটার শ্রমিক নেই। বাজারে বর্তমানে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ধান আবাদ করে পোষাচ্ছে না। সান্ত্বনা এই যে আস্তে আস্তে খরচ হয় আর একসাথে ধান বিক্রির টাকা হাতে আসে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে বোরো উফশী ৭ হাজর ৬৫০ হেক্টর, বোরো হাইব্রিড ২ হাজার ৪৯০ হেক্টর, নতুন জাতের বন্ধু ধান(১০০)- ৬০ হেক্টর এবং ব্রি-ধান(১০২)- ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
এদিকে, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে তীব্র খরার হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান, প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ করে বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলশ্রুতিতে এ বছর দেবীগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫ হেক্টর অধিক জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাঈম মোর্শেদ বলেন, এই মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বোরো ধানের রোগবালাই তুলনামূলক কম ছিল তাই ফলনও ভালো হয়েছে। এবার প্রতি বিঘায় ৩০ মণ পর্যন্ত ধান উৎপাদন হয়েছে। বোরো ধানের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে দাবদাহ এবং খরায় কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৮০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন