সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এবারও ঢাল হয়ে এ অঞ্চলকে ভয়ানক ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন। তবে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় এলাকার এসব মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি কাঁচা ঘরবাড়ি। এরমধ্যে আংশিক নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি এবং সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। জেলার ৭৮টির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৩টি ইউনিয়নে ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ৬০৪ হেক্টর জমির ফসল এবং ২০০ হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম শওকত মোড়ল (৬৫)।
দীপ ইউনিয়ন গাবুরার এস এম ওয়ায়েজ কুরুনী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। দমকা হাওয়ায়ার কারণে যা প্রবল আকারে আছড়ে পড়তে থাকে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর। এরইমধ্যে বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ও বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় স্থানীয় লোকজন। এতে বেড়িবাঁধ ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে গেছে হাজারো মানুষের বসতভিটা।
তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকাবাসী ও ব্যক্তি উদ্যোগে এখানকার মানুষ নিজেদের ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো সহযোগিতা করা হয়নি এই এলাকার মানুষকে।
রিমালের প্রভাবে ঘরবাড়ি হারানো পদ্মপুকুর ইউনিয়নের এক বৃদ্ধ বলেন, ঝড়ের রাতেই আমার ঘরের চাল ভেঙে গেছে। রান্নাঘরের চাল ওড়ে গেছে। এমনকি টয়লেটটা ভেঙে গেছে। এখন কী করব, কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না।
এদিকে, দুর্যোগ চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন উপকূলবাসী। দুর্যোগ চলাকালীন প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যেও স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর বেড়িবাঁধের ওপর মাটির আইল দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে রাখে। এতে করে সম্ভাব্য প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে গ্রামের পর গ্রাম ও হাজারো মৎস্যঘের।
অপরদিকে, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের অনেক স্থানে ঘরের ছাউনি ওড়ে গেছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামে গাছের ডাল ভেঙে কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে নীলডুমুর যাওয়ার সড়কের দুই পাশের চিংড়িঘেরগুলো একাকার হয়ে গেছে ।
স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ও বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় স্থানীয় লোকজন। এতে বেড়িবাঁধ ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে গেছে হাজারো মানুষের বসতভিটা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় বেশিরভাগ বেড়িবাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ায় নদ-নদীতে বড় জোয়ারের চাপ সামলানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণের তালিকা ওপর মহলে পাঠিয়েছি। এখন চূড়ান্ত তালিকার জন্য কাজ চলমান। চূড়ান্ত তালিকা পাঠানোর পরেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সরকারিভাবে সহযোগিতা পাবে।
মন্তব্য করুন