পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর যত্ন নিচ্ছেন রাজবাড়ীর খামারিরা। দেশীয় পদ্ধতিতে চলছে পশু মোটাতাজাকরণ। ইতোমধ্যে তাদের পশু খামার থেকে বিক্রি করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন খামারিরা। তবে অসহ্য গরমে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
তবে প্রাণিসম্পদ জেলা ট্রেনিং অফিসার ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার বলছেন, ঈদে কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশু জেলার চাহিদা মেটানোর পরও অন্য জেলায় সরবরাহ করতে পারব।
অল্প কিছুদিন পরই ঈদ। তাই কোরবানির পশুর একটু বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন জেলার ছোট-বড় মিলে ৭ হাজার খামারি ও কৃষক। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রতিটি খামারের এখন একই চিত্র। দেশীয় পদ্ধতিতে পশুর লালন পালনের চাহিদা বেশি। তাই কোনোরকম ইনজেকশন ও হরমোন ছাড়া খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ধান, ভুট্টা ও ছোলা। আর পশুর সুস্থতা রক্ষায় নিয়মিত দেখভাল করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। বর্তমানে অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ও দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস, খড়, ধান, ভুট্টা ও ছোলা খাওয়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরিও বেশি। তাই এ বছর গরুর দামও একটু বেশি হবে। আর ভারতীয় গরু আমদানির বিষয়ে তারা সঙ্কিত। তবে বিগত বছরের চেয়ে এ বছর গরু-ছাগল লালনপালন বেশি হয়েছে। জেলায় গরু-ছাগল ও গারল মিলে এ বছর প্রায় ৪০ হাজার গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। আর গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও গরু আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।
আর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, পশুর সুস্থতা রক্ষায় নিয়মিত দেখভাল করে চলেছেন তারা। দিচ্ছেন নানা ধরনের পরামর্শ।
থ্রি এস এগ্রোর মালিক ও খামারি বজলুর রহমান স্বপন কালবেলাকে বলেন, এ বছর খড়, ভুট্টা, ছোলা ও শ্রমিকের মজুরি বেশি। তাই গরুর যত্নে খরচ পড়ছে বেশি। এ অবস্থায় পাশের দেশ থেকে গরু আমদানি করা হলে লোকসানে পড়বেন তারা।
সেক্ষেত্রে খামারে আগ্রহ হারাবেন খামারিরা। তিনি সরকারের কাছে বাইরের দেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানান।
শেখ ডেইরি ফার্মের মালিক শেখ মো. মনির কালবেলাকে বলেন, খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু পালন করেছি। প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে তাই বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে বেশি। গোখাদ্যের দামও বেশি। খুবই চিন্তায় আছি এ বছরে। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে আসা গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।
খামারে কর্মরত শ্রমিক ইমরান হোসেন কালবেলাকে বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে লালনপালন করা পশুর চাহিদা বেশি। তাই কোনোরকম ইনজেকশন বা কীটনাশক ছাড়া খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ভুট্টা, ধান ও ছোলা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য সূত্র কালবেলাকে জানান, রাজবাড়ীতে এ বছর ২১ হাজার ৫২৯টি গরু, ১৮ হাজার ১৩০টি ছাগল, ১৩৮টি মহিষ ও ২৭৫টি ভেড়া ও গাড়লসহ মোট ৪০ হাজার ৭২টি পশু কোরবানির প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকা।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা ট্রেনিং অফিসার ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার কালবেলাকে জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশুগুলো প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে পালন করা হয়েছে। ঈদে কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদিপশু রাজবাড়ী জেলার চাহিদা মেটানোর পরও অন্য জেলায় সরবরাহ করতে পারব। কোরবানির পশুর যত্নে নিয়মিত খামারিদের পরামর্শদান ও খামার পরিদর্শন করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
মন্তব্য করুন