বর্ষার শুরুতে নতুন পানির সঙ্গে খাল-বিল, নদ-নদীতে দেখা মেলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনাগোনা। আর এসব মাছ শিকারে ব্যবহার হয় চাঁই। খাল-বিল ও নদী-নালা ধারাবেষ্টিত পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলায় অন্তত ২৫টি হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ চাঁইয়ের হাট।
উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা, মিয়ারহাট, স্বরূপকাঠি পৌরসভার জগন্নাথকাঠি বাজারসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বসেছে চাঁইয়ের হাট। এখানে সপ্তাহে দুদিন করে হাট বসে।
বর্ষায় পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে পানির মধ্যে এই যন্ত্রটি রেখে দেওয়া হয়। চলাচলের সময় ছোট ছোট মাছগুলো বাঁশের তৈরি এই ফাঁদে আটকা পড়ে। এটি গ্রামাঞ্চলের মাছ ধরার খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। এই সময়ে উপজেলার সব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে মাছও পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা, মিয়ারহাট, শশিদ, সাগরকান্দা, স্বরূপকাঠি, জগন্নাথকাঠি বাজার, মাদ্রা, দুর্গাকাঠি, একতা বাজার, করফা বাজারসহ জনপদের প্রতিটি হাট বাজারগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাছ ধরার ফাঁদ এই চাঁই কিনে থাকেন। কারিগররা ট্রলার, নৌকা ও ভ্যানবোঝাই করে হাটে বিক্রির জন্য এসব উপকরণ নিয়ে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে মৎস্য শিকারিরা এসব মাছ ধরার এসব উপকরণগুলো কিনতে আসে এখানে। বিক্রি হয় খুচরা ও পাইকারি দর হিসেবে। জিনিসের মান বুঝে ‘চাঁই’ প্রতি জোড়া ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়।
রামচন্দ্রপুর এলাকার চাঁই তৈরির কারিগর হরষিত মন্ডল জানান, একটি বাঁশের দাম ৩৫০-৫০০ টাকা। একটি বাঁশ থেকে কমপক্ষে ৬-৭টা চাঁই হয়। দিনে ৩ থেকে ৪টা তৈরি করা যায়। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। বর্ষার শেষ দিকে এসে আমাদের এলাকায় চাঁই বিক্রি বেড়ে যায়। কারণ এই সময়ে ছোট-ছোট মাছগুলো পানি কমার সময় চাঁইগুলো জমির আইলে বিশেষ কাদায় পুঁতে রাখলে ফাঁদে মাছগুলো আটকা পড়ে।
আটঘর বাজারে চাঁই কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা মতিউর রহমান বলেন, এই নেছারাবাদ উপজেলার প্রতিটি হাট বাজার থেকে আমি চাঁই ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করি। নেছারাবাদের তৈরি চাঁই অন্যান্য জায়গার তৈরি চাঁইয়ের থেকে বেশি কদর। প্রতি জোড়া চাঁইয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লাভ হয়।
দুর্গাকাটি গ্রাম থেকে চাঁই কিনতে স্বরূপকাঠির জগন্নাথকাঠি হাটে আসা বিধান রায় জানান, এই মৌসুমে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি মাছ ধরতাম, তা বিক্রি করতাম ১৫০০ থেকে ১৮০০ শত টাকা। আমি প্রতি মৌসুমে পানি কমার সময় ৫ থেকে ৬ জোড়া চাঁই কিনে নিয়ে যাই। এগুলো দিয়ে যে মাছ পাওয়া যায়, তা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকি মাছ স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করি।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ বিসিক শিল্প কর্মকর্তা মো. মোজাহিদুল ইসলাম জানান, সমগ্র উপজেলা সন্ধ্যা নদীর শাখা-উপশাখা ও খাল বিল ধারাবেষ্টিত বলে প্রচুর পরিমাণে মাছ বিচরণ করছে। তাই স্থানীয় জেলেরা ও শখের বসে কিছু মানুষ এই চাঁই ক্রয় করে মাছ ধরে আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। তাই উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে এই চাঁই শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন