বগুড়ার শিবগঞ্জে কোরবানির পশুর হাটে ইজারাদার ও তার নিয়োজিত লোকজনরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত হাসিল (টোল) আদায় করছেন। অবিক্রিত পশু রাত না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে ফেরত নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী বজলুর রহমান গাবতলী উপজেলার ডাকুমারা হাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনেছেন। তাকে হাসিল দিতে হয়েছে ১০০০ টাকা। শিবগঞ্জের আনার আলী দাড়িদহ হাট থেকে একটি ৭৮ হাজার টাকায় গরু কিনে তাকে হাসিল দিতে হয়েছে ১০০০ টাকা। বগুড়া সদরের শেখের কোলার গৃহস্ত আজমল হোসেন বুধবার মহাস্থান হাট থেকে ১ লাখ ২২ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন। তাকে হাসিল দিতে হয়েছে ১২শ টাকা।
অথচ সরকারি নিয়মে প্রতি গরুতে হাসিল দেবার কথা ৫০০ টাকা। কিন্তু বগুড়া জেলার কোনো হাটেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। যদিও প্রশাসন থেকে বৈঠক করে বলা হয়েছে নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোথাও তা নেওয়া হয়নি। ফলে কোরবানি পশু কিনতে যাওয়া মানুষরা হাটের ইজারদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই হাটের হাসিল যাতে কোনভাবেই বেশি না নেওয়া হয়, এ নিয়ে আলোচনাসভা এবং নির্দেশনা থাকে ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর। প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশনা থাকার পরও ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটগুলোতে কঠোর নজরদারির অভাবে প্রতিনিয়ত গরু ছাগল বিক্রিতে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গরুতে ৫শ টাকা এবং ছাগল বিক্রিতে ১৫০ টাকা হাসিল আদায় করার কথা থাকলেও প্রায় প্রতিটি হাটে ৮শ থেকে ১২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
গরু ছাগল বিক্রিতে যে রশিদ দেওয়া হচ্ছে তাতে হাসিল আদায় করার টাকার পরিমাণ লেখা হচ্ছে না বা রশিদে হাসিলেও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হচ্ছে না। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে ঠকছেন। বগুড়ার প্রায় প্রতিটি হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। এটি অনিয়ম হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ক্রেতা বিক্রেতারা।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটে ক্রেতার কাছ থেকে ৭৫০ এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বগুড়া পৌরসভার নিয়ন্ত্রাণাধীন সুলতানগঞ্জ হাট এবার ইজারা না হওয়ায় খাস আদায় করা হচ্ছে। এই হাট থেকে খাস আদায় করা হলেও গরু প্রতি এক হাজার এবং ছাগল প্রতি ৫শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। খাস আদায়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আদায় করা হলেও নজর দিচ্ছেনা পৌরসভা কর্তপক্ষ।
অতিরিক্ত হাসিল আদায় প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন জানান, সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে যাতে বেশি আদায় না করা হয় সেজন্য ইউএনওর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএন ইমরুল কায়েস বলেন, কোরবানির হাটের হাসিল আদায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা অতিরিক্ত হাসিল আদায় প্রসঙ্গে বলেন, কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে হাসিলের টাকার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি বাড়াতে চেয়েছেন। তবে কত বাড়াবেন তা বলা হয়নি। এ কারণে কিছু বেশি আদায় করা হচ্ছে।
বগুড়ার জেলা প্রশসক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারিত হাসিলের বেশি নেওয়া যাবে না। বিক্রেতা হাসিলের আওতায় পড়ে না। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাঠে পশুর হাট বসানো বেআইনি। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন