কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদে ব্যস্ততা বাড়লেও ক্রেতা সংকটে নেত্রকোনার কামারশিল্পীরা

নেত্রকোনায় কামার শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবি : কালবেলা
নেত্রকোনায় কামার শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবি : কালবেলা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া কামারশিল্পীরা। পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার সম্প্রদায়। তারা যেন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। তবে এ বছর ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকায় বিক্রি কমে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন এসব কামাররা।

জানা গেছে, ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি এবং কোরবানি ঈদে চাকু, ছুরি, চাপাতি, বঁটির বেশি দরকার পড়ে। তখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সব এলাকার কামার সম্প্রদায়। কামারপাড়ার দিনরাত টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে আশপাশের এলাকা। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি দেখতে সুন্দর ও অধিক ধারালো হয়, এমনকি দাম ও সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তাই কামারদের তৈরি জিনিসের চেয়ে মেশিনের তৈরি চাকু, দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ক্রমেই বাড়ছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন বলে অনেক কামাররা জানান। তারা বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় এই পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই আমাদের অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

কামাররা জানান, এক সময় তাদের বেশ কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরি জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারাবছর তেমন কোনো কাজ থাকে না। তবে ধান কাটার মৌসুম ও কোরবানি উপলক্ষে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় তাদের দৈনিক এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে তাদের হাতে থাকে ৫০০-৬০০ টাকা।

কেন্দুয়া দিগদাইর মোড়ের লোহার তৈজসপত্র তৈরির কারিগর (কামার) সুদন কর্মকার জানান, আমি অন্য কোন কাজ তেমন পারি না, তাই বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী কর্মকে এখনো ধরে রেখেছি। এ আয় দিয়েই সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করেন তিনি।

অন্য এক কামার অরুন কর্মকার বলেন, কয়েক বছর পূর্বেও কেন্দুয়া বাজারে অর্ধশত কামারের দোকান ছিল। কিন্তু মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির দাপটে তা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে নকলা বাজারে ৮-১০টি কামারের দোকান রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মোজাফফর পুর বাজার, চিরাং বাজার, রোয়াইলবাড়ি, সাহিতপুর , রামপুর, গন্ডা, নওপাড়াসহ বিভিন্ন হাটবাজারে কিছু কিছু কামারের দোকান আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার এসব কামাররা লোহা কিনে সেগুলোকে আগুনে পুড়ে দা, বঁটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তৈরিকৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ক্রেতা তাদের চাহিদা মোতাবেক কামারের দোকান থেকে জিনিস কিনছেন।

কামাররা এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মৌসুমি চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারিও বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও বেড়েছে। দা ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, ছুরি ছোট ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ১,০০০ টাকা থেকে একহাজার ৫০০ টাকা করে বেচাকেনা হচ্ছে। কামাররা বলছেন, লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রপাতির দাম একটু বেড়েছে।

অনেকে জানান, মেশিনে তৈরি আধুনিক যন্ত্রের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আযহার মৌসুমে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলোর মুখ দেখে। তবে কামার শিল্পীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তবা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে সতর্ক অবস্থানে তামিম

১০

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১১

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১২

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

১৩

পায়ের ফাঁকে বালিশ দিয়ে ঘুমালে কী হয়, জানেন কি?

১৪

জামায়াতের মুখে সংস্কার, হাস্যকর বিষয় : সোহেল

১৫

লবণ বেশি খেলে কী ঘটে শরীরে? জানালেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

১৬

গণতন্ত্রকামী দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে : তারেক রহমান

১৭

বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার

১৮

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাইতে হবে : এনসিপি নেতা ডা. জাহিদুল

১৯

বিপিএলে ফিক্সিং নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

২০
X