মিয়ানমারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ বন্ধ হয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়নি টেকনাফের সীমান্ত এলাকার লোকজন। এ ছাড়া টানা তিন দিন ধরে নাফ নদে সীমান্তের ওপারে দেখতে পাওয়া মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ‘যুদ্ধজাহাজটি’ শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প পথ সাগর উপকূলীয় পথেই সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামশুল আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সারারাত বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো টেকনাফ। শান্তিতে লোকজন ঘুমাতে পারেনি। তবে শুক্রবার ভোররাত থেকে শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সীমান্তের লোকজন আতঙ্কে আছি পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে ঘোলাটে হতে পারে।’
সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে শুক্রবার ভোররাত থেকে আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে দ্বীপে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। কখন থেকে তারা আগের নৌপথে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন যাতায়াত করতে পারবে, সেটি নিয়ে দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষ চিন্তিত রয়েছেন। কারণ বর্তমানে যে পথেই চলাচল করা হচ্ছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আলহাজ সোনালী বলেন, ‘আমরা দুই-তিন দিন মিয়ানমারের গোলাগুলি ও বিকট শব্দে সীমান্তে লোকজন অনেক আতঙ্কে ছিলাম। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে সীমান্তের পরিস্থিতি। তবে নতুন করে যাতে সীমান্ত পেরিয়ে কোনো লোক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’
সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের শাহ পরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় দুই দিন ধরে অবস্থান করা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি সেখান থেকে সরে গেছে। এটি মিয়ানমারের জলসীমানায় অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংদিয়া অংশে অবস্থান করছিল।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলিবর্ষণের ফলে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্তের ওপারের যেসব এলাকায় এখন গোলাগুলি চলছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের তুলনায় শান্ত। তবে যদি সেখানে বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হয়, আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।’
শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া দোকানদার আবুল কালাম বলেন, ‘এখানে কয়েক দিন ধরে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে সীমান্তে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।’
শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় জেলে জাফর আলম বলেন, ‘নাফ নদীতে আগে জাকি (ঝাঁকি) জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারতাম। মিয়ানমার সীমান্তের উত্তেজনার কারণে আমরা আতঙ্কে আছি কয়েকদিন ধরে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে যুদ্ধজাহাজটি সরে গেছে। শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে বড় জাহাজটি অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি একের পর এক মিয়ানমার থেকে সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ জন্য আপাতত এ নৌপথ দিয়ে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প পথ সাগর উপকূলীয় পথেই সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে।’
মন্তব্য করুন