ভরা মৌসুমেও পদ্মায় ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেরা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন মাছের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন-জীবিকা আহরণ করা মানুষেরা।
জানা যায়, আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। এ বছর ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও দৌলতদিয়ার পদ্মা-মেঘনা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। দিন ও রাতে নদীতে চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না জেলেদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া পদ্মা পাড়ের ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মুন্সি বাজার, দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াল জানি পাড়ার অধিকাংশ লোক মাছ ধরা পেশার উপর নির্ভরশীল। এই এলাকার জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে নদী পাড়ে বসবাস করেন। তারা অধিকাংশ দাদন নিয়ে, এনজিও থেকে লোন নিয়ে নৌকা নির্মাণ করে এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু এবার বৃষ্টি একেবারেই নাই বললেই চলে। আষাঢ় মাসেও খরা।
এ ছাড়া জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে একে একে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন আড়তে। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে জেলেরাই হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের হাজিরাই উঠছে না। এমন অবস্থায় অনেকে ট্রলারের ওপরে রান্না করছেন, আবার কেউ পরস্পরের সঙ্গে গল্প করে অলস সময় পার করছেন।
জেলে নাসর সরদার বলেন, সারাদিন নদীতে জাল ফেললেও কোনো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আড়তদারদের কাছ থেকে নেওয়া দাদন পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাই অনেক জেলে জাল গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা গ্রামের জেলে শিব প্রসাদ হালদার বলেন, 'আমি এই পদ্মা নদীতে মাছ ধরি ২৫ বছর ধরে। এ বছর দেখছি নদীতে ইলিশ মাছের খুবই আকাল। তারপর নদীতে গভীরতা নেই। সারাদিন নদীতে জাল বেয়ে ১-২ কেজি জাটকা ইলিশ পাওয়া যায়। বড় কোনো ইলিশ নদীতে পাওয়া যায় না। মনের দুঃখে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।
দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মৎস্য আড়তের মালিক শাজাহান শেখ বলেন, 'আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে মাছ কিনব। আর কীভাবে এই মাছ অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবসা করব। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।
জেলেরা নিবন্ধন তালিকার অনিয়ম নিয়েও এ সময় অভিযোগ করেন। বলেন, প্রজনন মৌসুমে যখন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল তখন অনেক জেলেই সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি। এমনকি সরকারিভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক প্রকৃত জেলে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজী বলেন, রাজবাড়ীর পদ্মা-মেঘনা নদীতে আমরা বছরজুড়ে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় আমরা জেলেদের সচেতন করে আসছি। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সফল হয়েছে। আগামী মৌসুমে এটির সুফল পাবে জেলেরা। তারপরও নদীতে চর জেগে উঠা, নদীর পানি দূষণ ও ইলিশের খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় মিঠা পানিতে ইলিশের বিচরণ কম। তবে ভর মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন