কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ রেহানার ছেলে ও স্বামীর ৩৫৪ শতক জমি জব্দ

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ছবি : সংগৃহীত
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ছবি : সংগৃহীত

শেখ রেহানার স্বামী ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাদের সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে থাকা ৩৫৪ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব সম্পদের বাজার মূল্য এক কোটি ৯৫ লাখ সাত হাজার টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ।

এদিন দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানকালে জানা যায়, তাদের মালিকানাধীন স্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তাক্ষর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির পূর্বে এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে অনুসন্ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অনুসন্ধান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এসব সম্পদের মালিকানা স্থানান্তর বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করতে না পারেন, এ মর্মে জব্দের আদেশ প্রার্থনা করছি।

শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

এদিকে ইউসিবি ব্যাংকের ৭০৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলায় এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের শেয়ার হস্তান্তর ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৫ এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

শেয়ারবাজার কারসাজি, নামে-বেনামে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আদনান ইমামের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাবেক পরিচালক আদনান ইমামের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তিনি বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, নামে-বেনামে ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছেন আদনান ইমাম। ঋণের বেশিরভাগ টাকা পাচার করে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়েছেন তিনি। তার নিজের নামে ১৪৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ৯৬৩ কোটি টাকা নিয়েছেন। তার মধ্যে মোট ৯০৫ কোটি টাকা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ায় ৩টি মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অর্থ পাচার মামলায় ইতোমধ্যে আদনানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট।

আদনানের দৃশ্যমান ঋণের মধ্যে রয়েছে, এনডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস (বিডি) লিমিটেডের নামে ইউসিবি ব্যাংক থেকে ৫৭০ কোটি (মামলা চলমান), এসআইবিএল থেকে ৮৯ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ২২ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), সিটি ব্যাংক থেকে ১৩৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৮৭ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি, মামলা চলমান), পদ্মা ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ওয়ান ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৫০ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ৭৭ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৩৩৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি, মামলা চলমান), এবি ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ওয়ান ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), এক্সিম ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৫৮ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), সিটি ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি টাকা (ইচ্ছাকৃত খেলাপি) ঋণ।

এ ছাড়া অদৃশ্য ঋণ বা বেনামি কাগুজে কোম্পানি বা অন্যের নামে কোম্পানি খুলেও ঋণ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। তার কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীর নামে কোম্পানি খুলে এসব ঋণগ্রহণ করেন তিনি। আইপিই গ্রুপের বেতনভুক্ত কর্মীর নামে ৫টি কোম্পানি খুলে ঋণ নেওয়ায় ব্যাংকের চাপে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন সেই গ্রহীতারা।

আদনানের এসব অদৃশ্য ঋণের মধ্যে রয়েছে, ইক্সোরা অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে এনআরবিসি থেকে ১২৬ কোটি, জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নামে ইউসিবি থেকে ২৩০ কোটি, টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ইউসিবি থেকে ২৬২ কোটি ও এনআরবিসি থেকে ৫ কোটি, বাংলা-ইউকে অ্যাগ্রো প্রডাক্টস লিমিটেডের নামে ৩৮০ কোটি এবং ডায়মন্ডরিজ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে ৩০ কোটি টাকা। অন্যের নামে নেওয়া সব ঋণ ইচ্ছাকৃত খেলাপি করেছেন তিনি। এর বাইরে বেনামি কোম্পানি ফুলপুর অ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে ইউসিবির কাওরান বাজার শাখা থেকে ঋণ নিয়ে দুটি গাড়ি কেনেন।

ঋণের দায়ে ১৫ কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি (চট্ট-মেট্রো-ভ-১১-১১১১) জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউসিবির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মাইনুল কবির।

এদিকে ইক্সোরা অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে দুইজন কর্মী এবং এক পোশাক কারখানার মালিকের নামে গোপনে এনআরবিসি ব্যাংক উত্তরা শাখা থেকে ধাপে ধাপে ১২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন আদনান। মানি লন্ডারিংয়ের কারণে গত বছরের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। দুদক তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আদনানের সঙ্গে স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমাম, বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম ও মা নিলুফার ইমামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবিসি ব্যাংক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের পর পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন আদনান ইমাম। সম্প্রতি তিনি ব্যাংকের পরিচালক পদ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অর্থনীতিতে গৃহস্থালির অবৈতনিক কাজের মূল্য ৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকা

মাছের ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল চাষিদের

জেন-জিদের তোপে নেপালে আরও এক মন্ত্রীর পদত্যাগ

ঢাবির কিছু শিক্ষক শিবিরের ভাষায় কথা বলছেন : নাছির

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কাজল, যা জানা গেল

আচরণবিধি মানছেন না প্রার্থীরা

শরীরে ভিটামিন সি কমার লক্ষণ এবং যা করবেন

নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল নিহতের ঘটনায় মামলা, আসামি ৪ হাজার

সাবেক সচিবসহ আ.লীগের সাত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার 

যুক্তরাষ্ট্রে আটক কর্মীদের ফেরাতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া 

১০

ভোটে পূরণকৃত ব্যালট দেওয়া সেই পোলিং অফিসার প্রত্যাহার

১১

শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে দুপক্ষের উত্তেজনা

১২

ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের দাম

১৩

সকালে খালি পেটে পানি খাওয়া কি সত্যিই ভালো?

১৪

আচরণবিধি ভঙ্গ করছে ছাত্রদল, প্রশাসন নির্বিকার : ফরহাদ

১৫

ডাকসু নির্বাচনে ৩৪ ঘণ্টা মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ

১৬

ভুয়া চিকিৎসাপত্রে ভারতীয় ভিসাপ্রত্যাশীরা খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা

১৭

এবার কোনো নৈশ ভোট হয়নি : শামীম

১৮

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করল যে ১৮ দেশ

১৯

ভোটারদের ভালো সাড়া পাচ্ছি, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী: উমামা ফাতেমা

২০
X