কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লাঙলকোটের পৌর মেয়রসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। ছবি : সংগৃহীত

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুমিল্লা জেলার লাঙলকোট পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেকসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ‎ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত।

‎দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কুমিল্লা জেলার লাঙলকোট খাটাচৌ হাজিবাড়ি এলাকার মো. আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার মো. সমছুদ্দীন কালু ও ঢালুয়াবাজার বড় বাড়ি এলাকার মো. ইউসূফ ভূইয়া। ‎ দুদকের আবেদন সূত্রে জনা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এসব ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, পদবাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতপূর্বক বিদেশে অর্থ পাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। ‎তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।

এদিকে ইউসিবি ব্যাংকের ৭০৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলায় এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের শেয়ার হস্তান্তর ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৫ এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

শেয়ারবাজার কারসাজি, নামে-বেনামে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আদনান ইমামের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাবেক পরিচালক আদনান ইমামের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তিনি বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, নামে-বেনামে ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছেন আদনান ইমাম। ঋণের বেশিরভাগ টাকা পাচার করে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়েছেন তিনি। তার নিজের নামে ১৪৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ৯৬৩ কোটি টাকা নিয়েছেন। তার মধ্যে মোট ৯০৫ কোটি টাকা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ায় তিনটি মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অর্থ পাচার মামলায় ইতোমধ্যে আদনানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট।

আদনানের দৃশ্যমান ঋণের মধ্যে রয়েছে, এনডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস (বিডি) লিমিটেডের নামে ইউসিবি ব্যাংক থেকে ৫৭০ কোটি (মামলা চলমান), এসআইবিএল থেকে ৮৯ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ২২ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), সিটি ব্যাংক থেকে ১৩৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৮৭ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি, মামলা চলমান), পদ্মা ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ওয়ান ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৫০ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ৭৭ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৩৩৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি, মামলা চলমান), এবি ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ওয়ান ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), এক্সিম ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), ইউসিবি থেকে ৫৮ কোটি (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), সিটি ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি টাকা (ইচ্ছাকৃত খেলাপি) ঋণ।

এ ছাড়া অদৃশ্য ঋণ বা বেনামি কাগুজে কোম্পানি বা অন্যের নামে কোম্পানি খুলেও ঋণ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। তার কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীর নামে কোম্পানি খুলে এসব ঋণগ্রহণ করেন তিনি। আইপিই গ্রুপের বেতনভুক্ত কর্মীর নামে ৫টি কোম্পানি খুলে ঋণ নেওয়ায় ব্যাংকের চাপে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন সেই গ্রহীতারা।

আদনানের এসব অদৃশ্য ঋণের মধ্যে রয়েছে, ইক্সোরা অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে এনআরবিসি থেকে ১২৬ কোটি, জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নামে ইউসিবি থেকে ২৩০ কোটি, টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ইউসিবি থেকে ২৬২ কোটি ও এনআরবিসি থেকে ৫ কোটি, বাংলা-ইউকে অ্যাগ্রো প্রডাক্টস লিমিটেডের নামে ৩৮০ কোটি এবং ডায়মন্ডরিজ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে ৩০ কোটি টাকা। অন্যের নামে নেওয়া সব ঋণ ইচ্ছাকৃত খেলাপি করেছেন তিনি। এর বাইরে বেনামি কোম্পানি ফুলপুর অ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে ইউসিবির কাওরান বাজার শাখা থেকে ঋণ নিয়ে দুটি গাড়ি কেনেন।

ঋণের দায়ে ১৫ কোটি টাকা দামের একটি গাড়ি (চট্ট-মেট্রো-ভ-১১-১১১১) জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউসিবির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মাইনুল কবির।

এদিকে ইক্সোরা অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে দুইজন কর্মী এবং এক পোশাক কারখানার মালিকের নামে গোপনে এনআরবিসি ব্যাংক উত্তরা শাখা থেকে ধাপে ধাপে ১২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন আদনান। মানি লন্ডারিংয়ের কারণে গত বছরের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। দুদক তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আদনানের সঙ্গে স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমাম, বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম ও মা নিলুফার ইমামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবিসি ব্যাংক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের পর পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন আদনান ইমাম। সম্প্রতি তিনি ব্যাংকের পরিচালক পদ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মধুপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু আটক

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

৩০ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকেই তৈরি হবে গ্রীন ডিজেল ও এভিয়েশন ফুয়েল

রাজধানীতে আ.লীগ নেতা মানিক দর্জি গ্রেপ্তার

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি-দুঃশাসনমুক্ত দেশ গড়বে : কফিল উদ্দিন

আফগানিস্তান নয়, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

এবার বার্সায় আরও বড় দুঃসংবাদ

হারের দায় নিজের কাঁধে নিলেন লিটন

ফেসবুকে হ্যাঁ না পোস্টের প্রতিযোগিতা

১০

ঢাকায় রুশ ঐক্য দিবসে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মনোমুগ্ধকর গালা সন্ধ্যা

১১

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে উদযাপিত

১২

ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি নেতা শেখ রবি’র গণসংযোগ

১৩

আবারও বন্ধ মেট্রোরেল চলাচল

১৪

অখণ্ড কিশোরগঞ্জ বাস্তবায়নের দাবিতে আবারও আন্দোলনে ছাত্র-জনতা

১৫

চট্টগ্রামে মুশফিক-রিয়াদের অভাব অনুভব করলেন রুবেল

১৬

নির্বাচন বানচালে কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করছে : মোনায়েম মুন্না

১৭

‘শেখ হাসিনা, আ.লীগ এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের আওতায় আনা হবে’

১৮

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিনের খোঁজ নিলেন ডা. রফিক

১৯

হোয়াটসঅ্যাপ না খুলেই বার্তা পড়ার কৌশল

২০
X