আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য ৯ শতাধিক বিচারকের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার (১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ইসি সাক্ষাৎ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি পরিচালনা এবং নির্বাচন চলাকালে সংক্ষিপ্ত অপরাধের বিচারের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এই প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ভোটগ্রহণের পূর্বে প্রার্থিতা নিয়ে যেসব মামলা উচ্চ আদালতে হবে সে ব্যাপারে ইসিকে নোটিশ প্রদান ও যুক্তিসঙ্গত শুনানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রধান বিচারপতির কাছে। ইসি ও বৈঠকসূত্রে এসব খবর জানা গেছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও ইসির চার কমিশনার বিচার বিভাগের সহযোগিতা চাওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে বৈঠক করতে সুপ্রিম কোর্টে যান। বেলা ২টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বিচারকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি (নির্বাচনী অনুসন্ধান) কমিটির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এবার নির্বাচন চলাকালে (ডিসেম্বর মাস) সিভিল কোর্টের বিচারকরা ভ্যাকেশনে থাকবেন। তাই প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে রেখেছি যেন ওই সময়ে বিচারকরা দায়িত্ব চলমান রাখেন। আর জানুয়ারি মাসে তো বিচারকরা আগের মতো করেই দায়িত্ব পালন করবেন। এইটুকু আলোচনা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সিইসিকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ইসিতে ১৪০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিতে একজন যুগ্ম জেলা জজ ও একজন সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজ নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার দিন হতে নির্বাচনী ফলাফলের সরকার গেজেট প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে মোট ২৮০ জন বিচারক প্রয়োজন। এ ছাড়া নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ বর্ণিত নির্বাচনী অপরাধের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচারের জন্য ৬৪৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেটকে ভোটগ্রহণের পূর্বের দুই দিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোট গ্রহণের পরের দুই দিন অর্থাৎ মোট পাঁচ দিনের জন্য নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্যগণ এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের তাদের ওপর অর্পিত নির্বাচনী দায়িত্ব যথাযথ পালনে সহায়তা এবং মনিটরিং করার উদ্দেশ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলা জজ মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্রিফিং সেশন আয়োজনের কথাও তুলে ধরা হয় বৈঠকে।
এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থিতা গ্রহণ বা বাতিলের বিষয়ে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট গ্রহণের তারিখের কিছুদিন পূর্বে উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা সংক্রান্ত আদেশ প্রদান করা হলে ওইসব আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার ও বিভিন্ন প্রকার কর্ম ছাপানো, নির্বাচনী মালামাল প্রস্তুতসহ নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫ (গ) অনুযায়ী, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ প্রদান না করে অন্তর্বর্তী বা কোনোরূপ আদেশ প্রদান না করার বিধান রয়েছে। ফলে এ ধরনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীদের নোটিশ ও যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ চাওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতির কাছে।
মন্তব্য করুন