বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে কর্মস্থলে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের মামলায় সংস্থাটির ছয় সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে নিম্ন আদালতকে (বিচারিক আদালত) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ পরিচালনায় আর কোনো আইনি বাধা নেই।
১৬ নভেম্বর এই আদেশ দেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের দ্বৈতবেঞ্চ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের ২০১৯ সালের এক আদেশের বিরুদ্ধে করা আসামিপক্ষের কোয়াশমেন্ট পিটিশনের (মামলা নং ফৌজদারি বিবিধ ৪৩৮৫৪/২০১৯) ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়।
অভিযোগে ছয় আসামির মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম (চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত), সহসভাপতি মো. আক্তার হোসেন (বর্তমানে কার্যকরী সভাপতি), অর্থ সম্পাদক নাজমুল কবির মজুমদার (বর্তমানে বহিস্কৃত), সমাজকল্যণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পান্না বিশ্বাস।
অন্যদিকে মামলার বাদী হলেন একই সংগঠনের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিস্কৃত) ও বিআইডব্লিউটিএ প্রধান কার্যালয়ে হিসাব বিভাগের তৎকালীন রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই দুপুরে সঞ্জীব কুমার দাশ দায়িত্ব পালনকালে অভিযুক্ত ছয় কর্মচারী সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সঞ্জীব কুমার দাশের ওপর হামলা চালান তারা। এতে রক্তাক্ত জখম হন তিনি। এ সময় হামলাকারীরা তার কাছে থাকা নগদ টাকা, সোনার চেইন, মোবাইল ফোনসেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কিছু কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েক কর্মচারী আহত সঞ্জীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে সিএমএম আদালতে ছয়জন হামলাকারীর নামোল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন তিনি। যার নং সিআর ১৫৯৭/২০১৭। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। তদন্ত শেষে ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
এরপর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত-১৫ তে পাঠান। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। আসামিদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অপর আসামি মো. আলী হোসেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। বিচারিক আদালতের এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ১নং আসামি আবুল হোসেন মামলাটি কোয়াশমেন্ট (খারিজ/বাতিল) চেয়ে উচ্চ আদালতে যান। দীর্ঘ চার বছর পর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আদালত আবুল হোসেনের আবেদন নাকচ এবং পিবিআইর অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
হাইকোর্টে সঞ্জীব কুমার দাশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মন্টু চন্দ্র ঘোষ শুনানি করেন। আর পিটিশনকারী আবুল হোসেনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান।
মন্তব্য করুন