বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ফরিদ মিয়া বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২২ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন পাটোয়ারী বিমানের ডিজিএম (সিকিউরিটি) মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ারসহ ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেন।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন বিমানের সিডিউলিং সুপারভাইজার মাহবুব আলম শরীফ, সিকিউরিটি গার্ড আইউব উদ্দিন, এমটি অপারেটর মহসিন আলী, মিজানুর রহমান, ফারুক হোসেন, নজরুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মো. মাসুদ, মো. মাহবুব আলী, এনামুল হক, মাহফুজুল আলম, ট্রাফিক হেলপার আল আমিন, আ. মালেক, আলমগীর হোসেন, গাড়িচালক আব্দুল্লাহ শেখ, সাজ্জাদুল ইসলাম, এমএলএসএস তাপস কুমার মণ্ডল, জাহিদ হাসান, হারুন অর রশিদ, সমাজু ওরফে সোবাহান, জাকির হোসেন, বিএফসিসি অপারেটর সুলতান হোসেন, মুরাদ শেখ ওরফে মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ বেতারের গাড়ি চালক ফারুক হোসেন, জুয়েল মিয়া, রাজিব মোল্লা, অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন ও হেলপার জাবেদ হোসেন।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর আনোয়ারসহ নিয়োগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির চার সদস্য বিমানের জিএসই পদসহ অন্য পদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। ওইদিন বিমানের বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপাল নজমুল হুদা ও ইঞ্জিনিয়ার কায়সার জামান নিজেদের অংশের প্রশ্নপত্র পেনড্রাইভে নিয়ে আসেন। তার কিছু সময় পরে আনোয়ার জিএমের (অ্যাডমিন) রুমে আসেন। তারা প্রশ্নপত্র সেট করার পর মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ারকে এর ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য দেখতে বলেন। তখন আনোয়ার বলেন ল্যাপটপের স্ক্রিনে দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে প্রিন্ট কপি চান। তাকে প্রিন্ট কপি দেওয়া হলে তিনি তা চেকব্যাক করেন। এরপর মেশিন দিয়ে ওই কপিটি নষ্ট করা হয়। এরপর তারা জুনিয়র টেইলর কাম অ্যাপহোলস্টারসহ ৯টি টেকনিক্যাল পদের জন্য একটি প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। প্রশ্নপত্র চেকব্যাকের সময় মেজর আনোয়ার গোপনে মোবাইল ফোনে খসড়া প্রশ্নটির ছবি তুলে নেন। পরে সেটি প্রিন্ট করে আসামি মাসুদ এবং জাহাঙ্গীর আলমকে সরবরাহ করেন। সেটির কপি জাহাঙ্গীর আলম, হারুন অর রশিদ, মাহফুজুল আলম ও আওলাদ হোসেনের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া প্রশ্নটির ছবি আসামি জাহাঙ্গীর, মাসুদ, হারুন, এনামুল, মাহফুজুল, জাহিদ, জাবেদেরও মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। গত বছরের ২০ অক্টোবর সকালে বিমানের প্রধান কার্যালয়ে জুনিয়র অপারেটর (জিএসই) ক্যাজুয়াল পদের প্রশ্নপত্র ফটোকপির সময় এর ছবি তুলে নেন এমএলএসএস জাহিদ হাসান। পরে তা আওয়াদ ও সমাজুকে সরবরাহ করেন।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি জাহাঙ্গীর আলম, মাসুদ, মেজর আনোয়ারসহ মামলার গ্রেপ্তার আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। তারা বিমানে নিয়োগ প্রার্থীদের থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগ্যদের চাকরিবঞ্চিত করে আসছিল। তাদের মধ্যে মেজর আনোয়ার, জাহাঙ্গীর, মাসুদ, মাহবুব অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, সংগ্রহ এবং বিক্রির কাজে নেতৃত্ব দেন। আর আওলাদ, মাহফুজ, হারুন, এনামুল, জাকির ও জাবেদ প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং ক্রয়-বিক্রয় করেন। জাহিদ প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতরণ করেন। এ ছাড়া মহসিন, মাহবুব, আইউব, মিজানুর, ফারুক, নজরুল, আল আমিন, মালেক, আব্দুল্লাহ, সাজ্জাদুল, আলমগীর, ফিরোজ, তাপস, সুলতান, মুরাদ, ফারুক, জুয়েল ও রাজিব এ চক্রের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
মন্তব্য করুন