যুক্তরাজ্যের নাগরিক পরিচয় দেওয়া স্মিথ থমসনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশি তরুণীর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তরুণীকে কিছু উপহার দিতে চান তিনি। বিমানবন্দরের পার্সেল শাখা থেকে তা সংগ্রহ করতে বলা হয়। উপহার পাওয়ার আশায় তিনবারে মোট চার লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা করেন তরুণী। তবে টাকা নেওয়ার পর প্রতারক চক্র তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। প্রতারিত হয়ে তরুণী আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় মামলাও দায়ের করেছেন। এ মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক প্রতারকের নামে ৬৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ মামলায় তিন আসামি মনিরুজ্জামান, আব্দুল কুদ্দুস রনি ও নুর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আসামি মনিরুজ্জামান প্রতারক চক্রের সদস্য। সে নিজে এবং প্রতারক চক্রের নির্দেশ মোতাবেক ৬৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতারণার ফাঁদে পড়ে একেক সময় একেক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। আসামি মনিরুজ্জামান তার ডেবিট কার্ড সহযোগী আসামি আব্দুল কুদ্দুস রনির মাধ্যমে তার অপর সহযোগীদের কাছে প্রদান করে।
অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার পর তারা ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করে থাকে। গ্রেপ্তার আসামি রনির কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৪৯টি চেক বই, ৪২টি এটিএম কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৩টি সিম ও ১০৮টি ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়েছে। আসামি নুর হোসেনের কাছ থেকে ৫৩টি চেক বই, ৩৩টি এটিএম কার্ড, সাতটি সিম ও ২৮টি চেকের পাতা জব্দ করা হয়েছে।
যেভাবে খপ্পরে পড়েন তরুণী: প্রতারক স্মিথ থমসন নিজেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিক পরিচয় দিয়ে তরুণীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হন। তাদের মধ্যে এক ধরনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তরুণীকে কিছু উপহার দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি। পরবর্তীতে গত ১৭ এপ্রিল ওই তরুণীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্সেল শাখায় যোগাযোগ করতে বলেন। তার মধ্যে শফিকুল ইসলাম নামে প্রতারক নিজেকে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল-২ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ অফিসার পরিচয়ে ফোন করেন। পার্সেলের চার্জ বাবদ ৪৬ হাজার টাকা দাবি করেন এবং শরিফ এন্টারপ্রাইজ নামে অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেন। তাদের কথামতো তরুণী ব্যাংকের মাধ্যমে এ টাকা জমা দেন। এ টাকা দেওয়ার পর প্রতারক শফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই তরুণী।
তখন তিনি জানান, পার্সেলে ১৭টি মালামাল ও কিছু ইউকে পাউন্ড রয়েছে। এজন্য ট্যাক্স বাবদ আরো ৯৭ হাজার টাকা দিতে হবে। ওই তরুণী দ্বিতীয় দফায় ব্যাংকে ট্যাক্স বাবদ এ টাকা প্রদান করেন। পার্সেল বাসায় পৌঁছে যাবে বলে জানানো হয়। যোগাযোগ করলে প্রতারক চক্রের মোবাইল বন্ধ পান তিনি। পরবর্তীতে গত ১৯ এপ্রিল তাকে ফোন করে জানানো হয়, রাজস্ব কর্মকর্তা পার্সেলের মালামাল ছাড়পত্র দিচ্ছে না। রাজস্ব বাবদ ৪ শতাংশ কর না দিলে কোনোভাবেই মালামালের ছাড়পত্র প্রদান করবে না। এ বাবদ ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ট্যাক্স দিলে বাসায় মালামাল ও পাউন্ডের পার্সেল বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। আর কোনো ট্যাক্স প্রদানের প্রয়োজন হবে না। পরদিন ২০ এপ্রিল তিনি ট্যাক্স বাবদ ব্যাংকে টাকা জমা দেন। এরপর তারা পার্সেল না পাঠিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল পার্সেল প্রদানের কথা বলে তিন লাখ ৬৯ হাজার টাকা দাবি করে। তখন ভুক্তভোগী তরুণী প্রতারিত হচ্ছেন বলে বুঝতে পারেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. শাহ আলম কালবেলাকে বলেন, গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা প্রতিষ্ঠিত প্রতারক। তারা পরস্পর যোগসাজশে উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার কাজ করে আসছে। চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন