স্পাউস ভিসার খপ্পরে পড়েছেন অসংখ্য বাংলাদেশি নারী। উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে চীনে পাচার করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে চক্রটির সদস্যরা। পরে চীনে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ঢাকায় আনা হয় এবং সেখানে বিভিন্ন চীনা নাগরিকের সঙ্গে ভুয়া বিয়ের আয়োজন করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, এরপর জাল কাগজপত্র তৈরি করে ‘স্পাউস ভিসা’র মাধ্যমে তাদের পাঠানো হয় চীনে। কিন্তু সেখানে চাকরির বদলে তাদের বাধ্য করা হয় যৌন ব্যবসায়, আর কেউ রাজি না হলে সহ্য করতে হয় নির্মম নির্যাতন।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি তরুণীদের বিয়ের ভুয়া আয়োজন করত চক্রটি। আসল নথির আদলে তৈরি করা হতো জাল কাবিননামা, আর এর ভিত্তিতেই এক রাতের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যেত ‘স্পাউস ভিসা’। ইমিগ্রেশনের কোনো জটিলতা ছাড়াই নবদম্পতি পরিচয়ে তাদের পাঠানো হতো চীনে। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হতো একটি আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
ভুক্তভোগী এক তরুণী জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা তাকে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে তারা। ওই তরুণীর ভাষায়, শুধু তিনিই নন- প্রলোভনে পড়ে তার খালাতো বোনকেও একই পথে নিয়ে আসেন। কিন্তু চীনে পৌঁছেই বুঝতে পারেন, তারা একটি প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। সেখানে তাদের জোর করে করানো হয় অসামাজিক কাজ, আর রাজি না হলে সহ্য করতে হয় অমানুষিক নির্যাতন। তিনি কোনোভাবে দেশে ফিরে এলেও তার খালাতো বোন এখনো চীনে আটকা রয়েছেন।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রের সঙ্গে অ্যামবেসি, ইমিগ্রেশন ও কাজি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। তারা অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা করে ভুয়া পরিচয়ে এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন। অনেকে বিয়ের নাটকে অভিভাবকের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। বর্তমানে আরও ৪ থেকে ৫টি চীনা চক্র নারী পাচার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন